মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার দেউরি তাপরিয়া গ্রামে এক চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা সামনে এসেছে, যা সমাধানে পুলিশ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ব্যতিক্রমী পথ অবলম্বন করে। এই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্তের কাছ থেকে অপরাধ উদ্ঘাটনে মাছির উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ও তদন্তের মোড়
৩১ অক্টোবর সকালে দেউরি তাপরিয়া গ্রামের একটি মাঠে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ শনাক্ত করে জানায় এটি ২৬ বছরের যুবক মনোজ ঠাকুর ওরফে মন্নু, যিনি ঘটনার আগের দিন বাড়ি থেকে কাজে বের হন এবং আর ফেরেননি। তদন্তে জানা যায়, তাকে সর্বশেষ তার ভাগ্নের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে দেখা গিয়েছিল।
মাছির উপস্থিতি অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ্যে আনে
তদন্ত চলাকালীন ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়, আর সেই সময় চরগাওয়ান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিষেক পিয়াসীর নজরে আসে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি যার জামার গায়ে মাছি ঘোরাঘুরি করছে। সন্দেহবশত তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় এবং তার জামা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় তার জামায় রক্তের দাগ পাওয়া যায়, যা সেই খুনের শিকার মনোজ ঠাকুরের রক্ত বলে নিশ্চিত হয়।
পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধেই অভিযোগ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সোনালী দুবে জানান, অভিযুক্তের নাম ধরম ঠাকুর, যিনি মৃত মনোজের ভাইপো। তদন্তে জানা যায় যে ঘটনার দিন নিহত এবং তার ভাগ্নে ধরম ঠাকুর একসঙ্গে মদ ও মুরগি কিনে সময় কাটাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়, যা দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে। সেই মুহূর্তে মাতাল অবস্থায় থাকা ধরম ঠাকুর হাতের কাছে থাকা ভারী কোনো অস্ত্র দিয়ে তার মামাকে আঘাত করে। গুরুতর আঘাতে মনোজ ঘটনাস্থলেই মারা যান, এবং তারপর ধরম পালিয়ে যান।
অপরাধ স্বীকার ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা
জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রথমে নির্দোষ দাবি করলেও, পুলিশি চাপ ও সিসিটিভি ফুটেজের প্রমাণের মুখে ধরম ঠাকুর শেষ পর্যন্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। পুলিশ অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় জবলপুর পুলিশ মাছি ও ফরেনসিক প্রমাণের সাহায্যে সফলভাবে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে, যা পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।