মালদার পুখুঁরিয়া থানার কোকলামারি এলাকার সাদ্দাম নাদাপ (৩৬) ১৪ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তার সন্ধান মিলল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন এলাকা থেকে, যেখানে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তারই কাকিমা মৌমিতা হাসানকে গ্রেফতার করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। খুনের নেপথ্যে কাকিমার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের তত্ত্ব উঠে আসছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সুপারি কিলারকে ভাইপোকে কুপিয়ে খুন করে দেহ টুকরো করে মেঝেতে প্লাস্টার করে দিয়েছিল কাকিমা।
কাকিমার বাড়ির একতলা অফিস ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ
ঘটনার বর্ণনা শুনলে মনে হবে যেন কোনও বলিউড থ্রিলারের দৃশ্য। ১৮ মে রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন সাদ্দাম। পুলিশ জানায়, সাদ্দাম ভিন রাজ্যের শ্রমিক সরবরাহ ঠিকাদার ছিলেন এবং ইংরেজবাজার শহরের বাপুজি কলোনির কৃষ্ণপল্লি এলাকার কাকিমার বাড়ির একতলা অফিস ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ করতেন। এছাড়া তিনি জমি-জায়গার বেচাকেনায়ও যুক্ত ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজের দিন সাদ্দাম তার ব্যবসার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। নিখোঁজের পর স্ত্রী নাসরিন খাতুন ইংরেজবাজার থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। শীঘ্রই পুলিশের সন্দেহ কাকিমা মৌমিতার দিকে যায় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কাকিমার সঙ্গে সাদ্দামের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
পুলিশ তদন্তে সামনে আসে এক ভয়াবহ সত্য। কাকিমার সঙ্গে সাদ্দামের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যা পরকীয়া সম্পর্কের আকার ধারণ করেছিল। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে মোটা টাকার লেনদেনের বিবাদ চলছিল। মৌমিতা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, পাঁচ বছর ধরে এই সম্পর্ক চলছিল এবং ব্যবসা-বিতর্ক ও সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
কুপিয়ে প্লাস্টার করা মেঝেতে পুঁতে দেওয়া হয়
খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে কুপিয়ে প্লাস্টার করা মেঝেতে পুঁতে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, দেহ লুকোতে তিন থেকে চার জন দুষ্কৃতীর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। মৌমিতা প্রকাশ করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাদ্দাম থেকে ব্ল্যাকমেলড হচ্ছেন এবং নিজের স্বামী ও নাবালক সন্তানদের প্রাণহানির হুমকিও পাচ্ছেন। তাই শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নেন। সাদ্দামের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তীব্র শাস্তি দাবি করছেন। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এই দৃষ্টিকটু খুনের খবর শুনে। পুলিশ এখন ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনার মুল রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত।
এই হত্যাকাণ্ড যেন একটি হাড়হিম শিরশিরে কাহিনী, যা দেখিয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের গভীর অন্ধকার এবং অর্থের লোভের করাল ছায়া।