পৃথিবী থেকে সাত মাসব্যাপী যাত্রার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গল গ্রহের মাটি মাটি ছুঁল ‘পারসিভেরান্স’ (Perseverance)। শুধু তাই নয়, শুক্রবার অবতরণের পরই লালগ্রহের প্রথম ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছে নাসার মার্স রোভারটি। পাশাপাশি, গ্রহটিতে প্রাণের সন্ধান শুরু করেছে যানটি।
এই দুর্দান্ত মিশনের সাফল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতটা গর্বিত, ঠিক ততটাই গর্ববোধ করছেন ভারতীয়রা। কারণ এই মিশনে যে বিজ্ঞানীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমেরিকান-ভারতীয় বিজ্ঞানী ডক্টর স্বাতী মোহন (Swati Mohan)। এছাড়াও ইতিহাসে জড়িয়ে গেল ৩ ভারতীয়র নামও। যাঁদের মধ্যে আবার ২ জন বাঙালি।
বৃহস্পতিবার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের মাটি স্পর্শ করল নাসার পারসিভেরান্স রোভার। আর নাসার এই মিশনে সফলতার পেছনে হাত রয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন বিজ্ঞানী ডঃ স্বাতী মোহনের। যিনি জন্মসূত্রে একজন খাঁটি ভারতীয়। তাঁর হাতেই ছিল রোভার ল্যান্ডিংয়ের সমস্ত খুঁটিনাটি।
রোভারের অ্যাটিটিউড নিয়ন্ত্রণ এবং সেটা যাতে সঠিকভাবে মঙ্গলের মাটিতে নামতে পারে সেই বিষয়ের দায়িত্বে ছিলেন স্বাতী। NASA-র এই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন যে পারসিভেরান্স যে মঙ্গলে নেমেছে সেটা নিশ্চিত ভাবে খবর পাওয়া গিয়েছে। এবার অতীতে এই গ্রহে প্রাণের চিহ্ন ছিল কি না, তা খুঁজবে এই রোভার।
এই প্রকল্পে স্বাতী কাজ করছেন প্রায় সাত বছর ধরে। এর আগে শনিতে নাসার কাসিনি অভিযানেও কাজ করেছেন তিনি।
মহাজগতের প্রতি স্বাতীর এই টান অবশ্য জন্মেছিল সেই ছোট্টবেলায়। স্টারট্রেক দেখে। জন্ম বেঙ্গালুরুতে, তবে মাত্র এক বছর বয়সে আমেরিকায় চলে আসেন স্বাতী। সময়টা ১৯৮৬। ছোটবেলা কেটেছে নর্দার্ন ভার্জিনিয়া–ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায়। ন’ বছর বয়সে প্রথম স্টারট্রেক দেখেন। তার পরেই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আগ্রহ জন্মায়। ঠিক করেন, এই ব্রহ্মান্ডে নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বেড়াবেন।
যদিও ছোটবেলায় স্বাতী ভাবতেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হবেন। বাবা চিকিৎসক বলেই এই ইচ্ছাটা ছিল। কিন্তু ক্রমে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি বেশি করে মনে ধরে স্বাতীর। সেই ভালোলাগা বাড়িয়ে দেন স্কুলের শিক্ষক। স্বাতী ঠিক করেন ইঞ্চিনিয়ারিংই পড়বেন। মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএস) করেন স্বাতী। এর পর অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্সে মাস্টার্স অব সায়েন্স (এমএস) করেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। সেখান থেকেই পিএইচডি।
তবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি। স্বাতী জানালেন, ‘৩ থেকে ৫ বছর অন্তর ভারতে যাই। বেঙ্গালুরুতে আমাদের এখনও বাড়ি আছে। মা, বাবা প্রতি বছরই সেখানে গিয়ে কয়েকটা মাস কাটিয়ে আসেন। আমার স্বামী সন্তোষেরও বাড়িও বেঙ্গালুরুতে। তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও শিশু চিকিৎসক।’
তবে কেবল স্বাতী নন নাসার মঙ্গল অভিযানে সামিল হয়ে ইতিহাসে ঢুকে পড়লেন আরও ৩ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এদের মধ্যে আবার ২ জন বাঙালি।
এদের মধ্যে রয়েছেন 'ইনজেনুইটি'-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার বেঙ্গালুরুর জে বব বলরাম। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনও গ্রহে যে এ বার প্রথম যে হেলিকপ্টার ওড়ানো হবে সেই ইনজেনুইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়র বব।
মহিষাদলের বাঙালি ছেলে অনুভব দত্তও নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ইতিহাসের খাতায়। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডায়নামিক্স ও এরো-ইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক অনুভব বছর ৩০ আগে মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টার ওড়ানোর কথা ভেবেছিলেন।
অনুভবের মতই বাঙালিকে গর্বিত করছেন সৌম্য দত্ত। বর্ধমানের আদি বাসিন্দা সৌম্য যে প্যারাশুটের মাধ্যমে লাল গ্রহে ‘পারসিভেরান্স’ পা দিয়েছে, তার নির্মাণের সঙ্গে জড়িত।