মেঘভাঙার পরে হড়পা বানে সাফ হয়ে গিয়েছে উত্তরকাশীর বিস্তীর্ণ এলাকা। গোটা গ্রাম গ্রাস করেছে কাদামাটি। এখনও পর্যন্ত ৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বহু মানুষ নিখোঁজ। এহেন পরিস্থিতির মধ্যেই আবার টানা ভারী বৃষ্টিও চলছে। বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলা।
মঙ্গলবার বিকেলে ভয়াবহ মেঘভাঙার জেরে ধারালি গ্রামে হঠাৎই নেমে আসে কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপের স্রোত। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের, নিখোঁজ অন্তত ৬০ জন। নিখোঁজ ৯ জন সেনা জওয়ানও। আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন।
উত্তরাখণ্ডের ধারালি এক জনপ্রিয় পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে একাধিক হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে। সেই গ্রামের অর্ধেকটাই এখন চাপা পড়ে রয়েছে কাদা, পাথর আর ধ্বংসস্তূপের নীচে।
বিপর্যয়ের ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। পাহাড়ের উলটো দিক দিয়ে দ্বিতীয় ধাক্কায় নেমে আসে আরও এক বন্যার ঢল, যা গিয়ে আঘাত করে পাশের সুখি গ্রামে।
সেনা, NDRF এবং SDRF-এর দল উদ্ধারকাজ করছেন। কিন্তু প্রকৃতির রোষ কমছে না। টানা বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা, নষ্ট হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খারাপ আবহাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারও নামাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের ১৬৩টি রাস্তায় ধস, যার মধ্যে রয়েছে ৫টি জাতীয় সড়ক ও ৭টি রাজ্য সড়ক।
এই বিপর্যয়ের পর প্রথমবারের জন্য মৃতদেহ খোঁজার কাজে বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর (Cadaver Dogs) মোতায়েন করছে NDRF। দিল্লি থেকে আনা হচ্ছে এই কুকুরদের একটি জুটি।
আবহাওয়া দফতরের তরফে হরিদ্বার, নৈনিতাল, উদম সিং নগর সহ একাধিক জেলায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। আরও কিছু জেলায় রয়েছে কমলা সতর্কতা। ডেরাডুন, চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, বাগেশ্বর সহ ১০টি জেলায় বুধবার সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ সফর মাঝপথে কাটছাঁট করে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ফিরে আসেন দেরাদুনে। জরুরি বৈঠকে তিনি স্পষ্ট বলেন, এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য মানুষের প্রাণ রক্ষা। সমস্ত প্রশাসনিক স্তরকে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা বইছে বিপদসীমার কাছাকাছি। আপাতত কেদারনাথ ধাম যাত্রা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাগেশ্বরে ফুলেফেঁপে উঠেছে গোমতি ও সরযূ নদী।
একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে পড়ছে উত্তরাখণ্ডের পর্বতশৃঙ্গ ও পরিকাঠামো। পরিবেশবিদরা সাফ বলছেন, প্রকৃতিকে রুখে যথেচ্ছ হোটেল, হোমস্টে তৈরি করা হয়েছে উত্তরাখণ্ড জুড়ে। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে।