তামিল সুপারস্টার ও তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (TVK) প্রধান বিজয়ের জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়ে গেল ৩৯।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখনও ৯৫ জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে। তাই সংখ্যাটা বাড়ার আশঙ্কা।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আহতদের চিকিত্সার দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্য সরকার।
বস্তুত, তামিলনাড়ুতে সিনেমার তারকাদের জনপ্রিয়তা বা কিছু রাজনৈতিক নেতার জনপ্রিয়তার আবেগ অন্য উচ্চতায়। অতীতেও দেখা গিয়েছে, প্রিয় অভিনেতা বা নেতানেত্রীদের জন্য মানুষ প্রাণও বাজি রাখতে রাজি।
বিজয় সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন। তৈরি করেছেন নতুন দল তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (টিভিকে)। শনিবার ওই দলের জনসভা ছিল চেন্নাই থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে করুরে। মুখ্য বক্তা ছিলেন বিজয়ই। বিজয়কে দেখতে ও তাঁর কথা শুনতেই লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হন।
তামিলনাড়ুর মন্ত্রী টিআরবি রাজার অভিযোগ, TVK র তরফে একটি জনসভার আবেদন জানানো হয়েছিল। ওই জায়গাতেই AIADMK ও কদিন আগেই জনসভা করেছিল। কোনও দুর্ঘটনা হয়নি।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, একাধিক শর্তে TVK কে জনসভার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ওরা তা ঠিকমতো পালন করেনি। টিভিকে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া জানিয়েছিল, সভা হবে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে। তাই সকাল থেকেই মানুষ জড়ো হতে থাকেন।
তাঁর আরও অভিযোগ, জনসভায় যাঁরা জড়ো হন, তাঁদের খাওয়ার জলের পর্যন্ত ব্যবস্থা করা হয়নি দলের তরফে। খাবারও ছিল না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই ভাবে থাকায় অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। তারপর ৭ ঘণ্টা দেরি করে সভায় পৌঁছন অভিনেতা বিজয়। সন্ধে ৭টার পরে। সঙ্গে আরও ভিড়।
আগে থেকেই প্রচুর মানুষ ছিলই। বিজয়কে দেখতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পুলিশের শর্ত একটিও মানা হয়নি। এমনকী বিজয় যখন ভাষণ দিচ্ছেন, তখনও দেখা যায়, কিছু মানুষ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে দেওয়া হয়নি সংগঠনের তরফে। বিজয় প্রচার সেরে আরামে এয়ারপোর্ট চলে গেলেন। প্রাইভেট বিমানে চেন্নাই উড়ে গেলেন। এদিকে মৃত্যু মিছিল চলছে।
পরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বিজয় লেখেন, আমার হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে রয়েছি আমি যা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার ভাই-বোনেরা যারা কারুরে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
শাসকদল ডিএমকে তীব্র নিশানা করছে। দলের মুখপাত্র সর্বানন আন্নাদুরাইয়ের বক্তব্য, এটা অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের ষড়যন্ত্র। বিজয় স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে একটা নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠান শুরু হবে, কিন্তু তা হয়নি। এত জনতা প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
ভিড় জমানোর জন্যই এটা করা হয়েছিল। এটা উদ্যোক্তাদের নোংরা পরিকল্পনা। যারাই এর জন্য দায়ী, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। মিস্টার বিজয়ও অপরাধী, তিনি নিজেকে নির্দোষ বলতে পারেন না।
মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে তামিলনাড়ু সরকার। বিজয়ের বাড়িতে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।