আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় কয়েকশো মৃত্যু। শুধু মানুষ নয়, পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একাধিক নিরীহ কুকুর, গাছে বসে থাকা পাখিও। বিমানের আগুন এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে পালানোর সময়ই মেলেনি কারও।
বিমান দুর্ঘটনা: কয়েক মিনিটেই শেষ সব
এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়ে যায় আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে। যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে বিমানে ছিলেন ২৪২ জন। কিন্তু ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ও আবাসন এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ এক বিকট শব্দ হয়, তারপরই আগুন ও ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। স্থানীয়রা ছুটে যান সাহায্য করতে, কিন্তু এতটাই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল যে সাধারণ মানুষ কিছু করার সুযোগই পাননি।
কুকুর-পাখির পালানোও ছিল অসম্ভব
রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) এক অফিসার জানান, বিমানের ফুয়েল ট্যাঙ্কে থাকা ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এ। তিনি বলেন, 'এই তাপ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে আশেপাশের গাছের ডালে বসে থাকা পাখিরা বা আবাসনের আশপাশে ঘোরাঘুরি করা কুকুরগুলিও পালাতে পারেনি। আমরা বহু পোড়া কুকুর ও পাখির মৃতদেহ উদ্ধার করেছি।'
স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, এই এলাকায় বহু বছর ধরে বেশ কয়েকটি কুকুর ছিল যাদের নিয়মিত খাওয়াতেন তাঁরা। সেই কুকুরগুলোর মৃত্যু দেখে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। গাছে বসে থাকা পায়রা, চিল, এমনকি ছোট্ট বাবুই পাখির বাসাও এক মুহূর্তে ছারখার হয়ে যায়।
'মানুষের মতোই প্রাণ ছিল ওদেরও'
প্রাণীদের মৃত্যু নিয়ে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অনেকেই। এক দমকল কর্মী বলেন, “আমরা এতগুলো মানুষের দেহ টেনেছি, কিন্তু যখন একটা ছোট্ট পোড়া কুকুর বা ছাই হয়ে যাওয়া পাখিকে দেখতে পাই, তখন হৃদয়টা আরও ভারী হয়ে যায়। ওরাও তো কাউকে কিছু না বলে শুধু টিকে থাকতে চাইছিল।”
ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসকরাও মৃত্যু তালিকায়
বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়ে, তা মূলত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের আবাসন। ফলে সাধারণ যাত্রী ও ক্রু ছাড়াও অনেক ছাত্র, স্টাফ, আবাসিক এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানায়, এখনও পর্যন্ত ২৬৫টি মৃতদেহ আনা হয়েছে সিভিল হাসপাতালে। বহু দেহ এমনভাবে পুড়ে গিয়েছে যে শনাক্ত করা সম্ভব নয় — ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই পরিচয় জানা যাবে।
এই মৃত্যু শুধুই সংখ্যায় বোঝানো যায় না
এই দুর্ঘটনা শুধু মানুষের মৃত্যু নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে পুড়ে গেল জীবনের প্রতীক — যারা কথা বলে না, কিন্তু পাশে থাকে। পথের ধারে বসে থাকা কুকুর, জানালার কার্নিশে বসে থাকা চড়ুই — তারা আর কখনও ফিরবে না।