Advertisement

বিদ্যাসাগর থেকে সানাই! কাশীর সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালির দাপটের ইতিহাস

এককালে সংস্কৃত শেখার জন্য বহু বাঙালি পাড়ি দিতেন কাশী। একটা সময় ছিল যখন কাশীতে রীতিমতো শাসন করতেন বাঙালি সংস্কৃতি পণ্ডিতরা।

নবরূপে বিশ্বনাথ মন্দির। নবরূপে বিশ্বনাথ মন্দির।
শুভঙ্কর মিত্র
  • কাশী,
  • 13 Dec 2021,
  • अपडेटेड 8:47 PM IST
  • দুনিয়ার প্রাচীনতম শহর। লোকে বলে, ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন কাশী।
  • এককালে সংস্কৃত শেখার জন্য বহু বাঙালি পাড়ি দিতেন কাশী।
  • এ শহরই তো বাঙালিকে দিয়েছে বেনারসি শাড়ি, সানাইয়ের সুর, খেয়াল ও ঠুমরি।

'ভোলে বাবা পার করে গা', শ্রাবণ মাসে কাঁধে জল নিয়ে এগিয়ে চলেন বাবার ভক্তরা। শিবই যেন বাঙালির আপন দেবতা। কারণ অল্পেতেই খুশি তিনি। আবার বাংলার জামাইও বটে! দুর্গা যে ঘরের মেয়ে। তাঁর কত্তা দেবাদিদেব মহাদেব। তিনিই আবার কাশীতে বাবা বিশ্বনাথ। গঙ্গায় ডুব দিয়ে কাশীর মন্দিরে জলাভিষেক করেননি এমন বাঙালি হাতে গোনা। আর কাশীর সঙ্গে বাংলার সম্পর্কটাও আজকের নয়। তাই ডবল টিকা নেওয়া থাকলে নবরূপের বিশ্বনাথ মন্দির চত্বর দর্শন করে আসতেই পারেন।                                 

দুনিয়ার প্রাচীনতম শহর। লোকে বলে, ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন কাশী। এ নগরীর হর্তাকর্তা বিধাতা বাবা বিশ্বনাথ। কিন্তু শুধুই ধর্ম দিয়ে বারাণসীকে চেনা যাবে না। সংগীত, শিক্ষার চর্চাকেন্দ্র। আর এমন শহরে বাঙালির বাস নেই, তাও কী হয়! বসবাসকারী বাঙালির সংখ্যাও কম নয়। লক্ষের বেশি। একটা গোটা এলাকাই বাঙালির। যার নাম বাঙালিটোলা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দিব্যি বাংলা বলে চলেছেন প্রবাসীরা। সে মহল্লায় রসের মধ্যে সাঁতার কাটা রসগোল্লাও মেলে। এখনও তিন হাজারের বেশি দুর্গাপুজো হয়। 

এককালে সংস্কৃত শেখার জন্য বহু বাঙালি পাড়ি দিতেন কাশী। একটা সময় ছিল যখন কাশীতে রীতিমতো শাসন করতেন বাঙালি সংস্কৃতি পণ্ডিতরা। ভট্টাচার্য পরিবারের কথা তো আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। এই কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটই পাণ্ডিতের প্রবল লড়াই দেখেছিল। একদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আর একদিকে ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র। সেই তর্কে জিতেছিলেন বিদ্যাসাগর। তার পর হরিশচন্দ্রের জীবনের মোড় বদলায়। বোধোদয় হয়, হিন্দি ভাষায় শিক্ষা কতটা দরকারি! পরবর্তীকাল তিনিই হয়ে ওঠেন আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের জনক। শুধু কি তাই পাণ্ডিত্যের চর্চার সঙ্গে সমাজসংস্কারও কতটা দরকার, ঈশ্বরচন্দ্রের সাহচর্যে শিখলেন ভারতেন্দু।    

আরও পড়ুন

এ শহরই তো বাঙালিকে দিয়েছে বেনারসি শাড়ি, সানাইয়ের সুর, খেয়াল ও ঠুমরি। নববধূর সাজে গাম্ভীর্য এনে দেয় বেনারসি শাড়ি। যা বেনারস থেকে কোন কালে যে হাত ঘুরে এ বাংলায় চলে এসেছে। বিসমিল্লার সানাই আজ হয়তো সাউন্ড বক্সে বাজে। বাঙালির জমিদারি, প্রতিপত্তি যখন ছিল তখন সানাইয়ের মুর্চ্ছনা ছাড়া বিয়ে মানে শ্রাদ্ধবাড়ি। কাশীতে শোনা যায়, বিসমিল্লার সুরে প্রসন্ন হতেন বিশ্বনাথও। মন্দিরের বাইরে বাজাতেন উস্তাদ। ব্রহ্মাণ্ডের স্বামী এসে বসে থাকতেন পাশে। ধর্মীয় বেড়াজাল ভেঙে কখন যে ভক্ত ও ভগবান পরস্পরে বিলীন হয়ে যেতেন! 

Advertisement

এ সব আজ ইতিহাস, যুগপৎ বর্তমানও। বাড়িঘরের জৌলুস কমলেও বাঙালিটোলার আভিজাত্য় এখনও অমলিন। এমন বাঙালি ইতিহাস বিজড়িত কাশী সেজে উঠেছেন নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। সোমবার বিশ্বনাথ ধাম করিডরের দ্বারোদঘাটন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গিয়ে দেখে আসতেই পারেন নতুন কাশীকে। গায়ে গায়ে বাড়ি আর তারের জঙ্গল ঘিরে ফেলেছিল বিশ্বনাথকে। মুক্ত হলেন গৌরীপতি। এমন মুক্তাঙ্গন দর্শন ও বাঙালি ইতিহাসের সাক্ষী হতে আগামী ছুটির গন্তব্য হোক বারাণসী। মোক্ষলাভের সঙ্গে ইতিহাসের হাতছানি!

Read more!
Advertisement
Advertisement