
পেশায় মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার। চমকপ্রদ কেরিয়ার ছিল ডা: শাহিন শহিদের। কিন্তু গত সপ্তাহে তাকে ফরিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অপরাধে। তদন্তকারীরা বলছেন,'হোয়াইট কলার টেরর' অর্থাৎ ডাক্তারির মতো পেশার আড়ালে জঙ্গির স্লিপার সেল হিসেবে কাজ করছিল সে। অনুমান, সরাসরি যোগ ছিল পাকিস্তানের কুখ্যাত জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি দলের সঙ্গে। লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পরিকল্পনায় শাহিন শহিদেরও হাত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মেয়ে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত শুনে কী বললেন তার বাবা?
শাহিনের বাবা কী বলছেন?
বাবা সইয়দ আনসারি বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তিনি জানিয়েছেন, গত দেড় বছর ধরে ডা: শাহিদ শহিদের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই ছিল না। সইয়দ আনসারি বলেন, 'আমার ৩ সন্তান, শোয়েব, শাহিন এবং পরভেজ। শাহিন প্রথমে কানপুরের GSVM মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করত। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপকের চাকরিও পায় সে। তবে ২০১৩ সালে বিনা নোটিশে ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছিস। মহারাষ্ট্রের জফর হায়াতের সঙ্গে বিয়ে করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিবাদের জেরে ২০১৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০২১ সালে মেডিক্যাল কলেজে অনুপস্থিতির কারণে ওকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। চাকরি ছাড়ার পর শাহিদ ফরিদাবাদ চলে গিয়েছিল।' তদন্তকারীদের অনুমান, ফরিদাবাদেই মুজাম্মিলের সঙ্গে আলাপ হয় শাহিনের। আল ফালহা বিশ্ববিদ্যালতেও মুজাম্মিলের মাধ্যমেই প্রবেশ তার। সেখান থেকেই আতঙ্কবাদী নেটওয়ার্কের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল শাহিন, অনুমান তদন্তকারীদের। শাহিনের বাবা আরও বলেন, 'পুলিশের থেকেই মেয়ের গ্রেফতারির খবর পেয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি না, আমার মেয়ে এমন কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।'
শাহিনের ভাইও স্ক্যানারে
গুজরাটের অপরাধ দমন শাখা শাহিনের ভাই পারভেজের লখনউয়ের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। বাড়ির বাইরে দাঁড় করানো একটি গাড়িতে রয়েছে ইন্টিগ্রাল ইউনিভার্সিটির স্টিকার। বাড়ি থেকে থেকে উদ্ধার হয়েছে মোবাইল এবং হার্ড ডিস্ক। ইন্টিগ্রাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগেই পারভেজ ইস্তফা দিয়েছে। সেও মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিল। ইতিমধ্যেই তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে গুজরাটের অপরাধ দমন শাখা।
এদিকে মুজাম্মিলরে গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে AK-37 রাইফেল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তদন্তকারীরা ডা: শাহিন শহিদের নাম পান। জানা গিয়েছে, শাহিন তার ভাই পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত।
কোন টাস্ক দেওয়া হয় শাহিনকে?
প্রাথমিক তদন্ত বলেছ, ডা: শাহিনকে ভারতে জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা উইংয়ের নেতৃত্বে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সদ্যই মাসুদ আজহার তার জঙ্গি দলের একটি মহিলা উইং খুলেছে। নাম দেওয়া হয়েছে জামাত-উল-মোমিয়েন। ভারতের মহিলা সাংবাদিক এবং ডাক্তারদের টার্গেট করা হচ্ছিল বলেও সূত্রের খবর। এ-ও অনুমান করা হচ্ছে, জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা উইংয়ের সুপ্রিম কমান্ডার, মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়ে আজহার সরাসরি ডা: শাহিনকে এই বিশেষ টাস্ক দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এই সাদিয়ার স্বামী ইউসুফ আজহার ১৯৯৯ সালের কান্দাহার হাইজ্যাকিংয়ের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল। বাহওয়ালপুরে অপারেশন সিঁদুর অভিযানের সময়ে ভারতীয় সেনার হাতে নিকেশ হয় সে।
সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের মাধ্যমেই ডা: শাহিন জইশ-ই-মহম্মদের সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানে যোগাযোগ করত বলে অনুমান। গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীনগরের নৌগাঁও এলাকায় জইশ-ই-মহম্মদের নামে পোস্টার পড়েছিল। সেই থেকেই পরিকল্পনা ফাঁদা হচ্ছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের।