নতুন বছর করোনার সাথে লড়াই করতে দেশবাসীর কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছে। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন দুই টিকাকেই জরুরি টিকাকরণের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ভি জি সোমানি জানিয়েছেন সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালিয়েছে। সেই রিপোর্ট তারা পেশ করেছে ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে। এই দুটি ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল পরীক্ষায় সমস্ত মান পূরণ করেছে। সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশেরও বেশি।
সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটির সুপারিশ মেনে কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিনের ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া। সেই সঙ্গে জাইদাস ক্যাডিলা হেলথকেয়ারের তৈরি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালেও দেওয়া হল ছাড়পত্র। এখন দেখার কোরনা ভ্যাকসিন দেশে কত ডোজ প্রস্তুত রয়েছে।
কত ডোজ টিকা প্রস্তুত?
তথ্য মতে, ভারত বায়োটেকের এর মধ্যে ভ্যাকসিনের এক কোটি ডোজ প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে, সিরাম ইনস্টিটিউটে কাছেও কোটির কাছাকাছি ডোজ প্রস্তুত। এই ভ্যাকসিনগুলি স্টোরেজ থেকে বার করে বিভিন্ন রাজ্যে প্রেরণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
কবে থেকে শুরু হবে টিকাকরণের কার্যক্রম?
ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভারত বায়োটেক এবং সিরাম ইনস্টিটিউটকে তাদের ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই এটিকে একটি দুর্দান্ত সাফল্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ভ্যাকসিনের অনুমোদনের পরে এখন টিকাকরণের দিন ঘোষণার অপেক্ষা তলছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, বারত সরকার ভ্যাকসিন নির্মাতাদের সাথে একটি ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ভ্যাকসিনের পরিমাণ ক্রয় করবে।
কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কেনা এই ভ্যাকসিন বিভিন্ন রাজ্যে প্রেরণ করা হবে। বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে পৌঁছনোর দায়িত্ব বহন করবে রাজ্য সরকারগুলি। কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ডিস্ট্রিবিউশন চেইন জোরদার করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটিতে ২ সপ্তাহ লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কীভাবে হবে টিকাকরণ?
সরকার নির্ধারিত অগ্রাধিকার অনুযায়ী প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী এবং তারপরে পুলিশ এবং আধা সামরিক কর্মীসহ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সরকারের কাছে এর ডেটা রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধনও ঘোষণা করেছিলেন যে সমস্ত ফ্রন্টলাইন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে প্রদান করা হবে।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন ঘোষণা করেছেন যে রাজধানীর প্রত্যেককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দিল্লিতেও, ভ্যাকসিনটি প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদের দেওয়া হবে, তার পরে ৫০ বছরের উর্দ্ধে লোকেদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফ্রন্টলাইনের কর্মীদের প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে। দিল্লির অভ্যন্তরে প্রায় তিন লাখ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং প্রায় ছয় লাখ ফ্রন্ট লাইনার রয়েছেন। প্রথমে তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। এর পরে, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
টিকাকরণ কোথায় হবে?
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে, সমস্ত রাজ্য সরকার নিজ নিজ রাজ্যে জেলা পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচির জন্য পৃথক কেন্দ্র চিহ্নিত করছে।
দিল্লিতে ১০০০ টিকাকরণ কেন্দ্র
দিল্লিতে টিকা দেওয়ার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ড্রাই রানও করা হয়েছিল যার মধ্যে একটি সরকারী হাসপাতাল, বেসরকারী হাসপাতাল এবং ডিসপেনসারি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভ্যাকসিনের স্টোরেজ সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের মতে রাজধানীতে প্রায় ১০০০ টি টিকা কেন্দ্র তৈরি করা হবে।
একইভাবে, প্রতিটি রাজ্যে টিকাকরণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে যেখানে কোউইন ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত লোকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
কত ডোজ প্রয়োজন?
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়া হবে। এই ভ্যাকসিন ইনজেকশন আকারে আকারে শরীরে দেওয়া হবে। ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিনটিকে ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি পর্যায়ে প্রয়োগ করা হবে। যে কোনও ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের মধ্যে ২৫ থেকে ৩৫ দিনের পার্থক্য থাকতে হবে।
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী হবে?
রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ড্রাগগুলিতে বহুবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভিজি সোমানি বলেছেন যে এই ভ্যাকসিনটির থেকে হালকা জ্বর, মাথা ব্যথা, অ্যালার্জি হতে পারে যা যেকোন ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রেই অতি সাধারণ বিষয়।