
মহাজনের ঋণের ফাঁদ। সর্বস্বান্ত কৃষক। গবাদি পশুর ব্যবসা শুরু করতে মাত্র ১ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই ঋণই সুদবাবদ ফুলে-ফেঁপে দাঁড়াল ৭৪ লক্ষ টাকায়! শেষ পর্যন্ত ধার শোধ করতে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হলেন মহারাষ্ট্রের এক কৃষক। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর জেলার বাসিন্দা রোশন সদাশিব কুড়ে। চাষাবাদে লোকসানের জেরে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে দু’টি দুধেল গরু কিনে ডেয়ারি ব্যবসা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। স্থানীয় দু’জন বেআইনি মহাজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ টাকা ধার নেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি। ব্যবসা শুরুর আগেই মারা যায় তাঁর কেনা দুই গরুই। পাশাপাশি ফসল নষ্ট হওয়ায় আরও চাপে পড়েন তিনি।
এর পরেই শুরু হয় মহাজনদের চাপ। অভিযোগ, প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে সুদ ও জরিমানা চাপানো হচ্ছিল ঋণের উপর। ঋণ শোধ করতে নিজের দুই একর জমি, ট্র্যাক্টর, দু’টি দু’চাকার গাড়ি এমনকি সোনার গয়নাও বিক্রি করে দেন কুড়ে। আত্মীয়দের কাছ থেকেও ধার নেন টাকা। তবু সুদের অঙ্ক কমেনি। বরং ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকে।
রোশনের দাবি, এক মহাজন তাঁকে লক্ষ্মণ উরকুড়ে নামে এক এজেন্টের কাছে পাঠান। সেই ব্যক্তি ২০ দিনের জন্য ৪০ শতাংশ সুদে টাকা ধার দেন। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় তাঁকে চরম প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিডনি বিক্রি করার। অসহায় অবস্থায় সেই প্রস্তাবেই রাজি হতে বাধ্য হন রোশন।
প্রথমে কলকাতায় তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কম্বোডিয়ায়। সেখানেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কিডনি অপসারণ করা হয়। এর বিনিময়ে পান ৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাতেও পুরো ঋণ শোধ হয়নি। উল্টে ভাঙা শরীর ও মানসিক যন্ত্রণাই এখন তাঁর নিত্যসঙ্গী।
রোশন কুড়ে জানিয়েছেন, গত চার মাস ধরে তিনি ন্যায়বিচারের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর দাবি, বেআইনি মহাজন, এজেন্ট এবং বিদেশে অঙ্গপাচারের সঙ্গে যুক্ত চক্রের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। এই ঘটনায় ফের একবার গ্রামীণ মহাজনি ঋণব্যবস্থা, বেআইনি সুদ ও অঙ্গপাচার চক্রের ভয়াবহ বাস্তবতা সামনে এল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।