
তালাক-ই-হাসানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন জানানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের শুনানি পর্বে দেশের শীর্ষ আদালত এই প্রথার তীব্র সমালোচনা করে। প্রশ্ন তোলা হয়, আধুনিক ও সভ্য সমাজে এই ধরনের বৈষম্যমূলক ঐতিহ্য গ্রহণ করা যায় কি না, তা নিয়ে। আইনজীবী বা তৃতীয় পক্ষেপ মাধ্যনে বিবাহবিচ্ছেদেক নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের দলিলে স্বামীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
মুসলিম ব্যক্তিগত আইনকে বলা হয় শরিয়া। এই আইন অনুযায়ী, তালাক অথবা বিবাহবিচ্ছেদকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমত, স্বামীর দ্বারা তালাক এবং দ্বিতীয়ত, স্ত্রীর দেওয়া তালাক।
তালাক আহসান: এতে স্বামী কেবল একবার 'তালাক' উচ্চারণ করেন। স্বামী এমনটা করার পর স্ত্রী ৩ মাসের ইদ্দত অর্থাৎ অপেক্ষা করার সুযোগ পান। এই সময়ের মধ্যে স্বামী ইচ্ছে করলে তালাক প্রত্যাহার করতে পারেন। এই পদ্ধতিটি পুনর্মিলনের সুযোগ দেয় এবং এটিই সবচেয়ে সহজ বলে বিবেচিত হয়।
'ইদ্দত' একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ 'গণনা'। ইসলাম আইন অনুযায়ী, ইদ্দত একটি অপরিহার্য ধারণা। এটি সাধারণত একজন মহিলার স্বামীর মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের পর অপেক্ষার সময়কাল। কোরানে ইদ্দতের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তালাক-ই-হাসান: এই পদ্ধতিতে স্বামী প্রতি ৩ মাস অন্তর একবার 'তালাক' উচ্চারণ করেন। যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় মাসের মধ্যে পুনর্মিলন হয় তাহলে বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তৃতীয়বার তালাক উচ্চারণের পর বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। এই প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে।
তালাক-ই-বিদ্দত (৩ তালাক): এই প্রক্রিয়ায় একজন পুরুষ একসঙ্গে ৩ বার 'তালাক' বলে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। এতে পুনর্মিলন বা পুনর্বিবেচনার কোনও সুযোগ নেই। বারত সহ অনেক মুসলিম দেশ যেমন মিশর, সিরিয়া, জর্ডন, কুয়েত, ইরাক এবং মালয়েশিয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে এটিকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল।
খুলা: মুসলিম সমাজের মহিলাদেরও বিবাহবিচ্ছেদের বিকল্প রয়েছে। মহিলারা খুলা তালাক পেতে পারেন। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই খুলা তালাকের অধীনে একজন মহিলা তাঁর স্বামীর থেকে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন। তবে এই ধরনের বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মহিলাকে মেহর দিতে হয়, যা বিয়ের সময়ে স্বামী দিয়েছিলেন। খুলা তালাকের জন্য স্বামীর সম্মতিরও প্রয়োজন পড়ে। যদি স্বামী রাজি না হন, তাহলে স্ত্রী ইসলামিক কাউন্সিল বা আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত লিখিত বাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং এতে সাক্ষী এবং মধ্যস্থতাকারী জড়িত থাকতে পারে।
তালাক মুবারত: ইসলামে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয় যে তারা সুখে একসঙ্গে থাকতে না পারে এবং উভয়ই আলাদা হতে চায়, তাহলে তারা পারস্পরিক সম্মতিতে তালাক নিতে পারে। এই পদ্ধতিটিকে শান্তিপূর্ণ এবং কোনও ঝগড়া ছাড়াই বিবেচনা করা হয়।
ইসলামে নারীদের কী কী অধিকার?
বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের অনেক অধিকার দিয়েছে। মোহরানা স্ত্রীর সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অধকার। এর অর্থ জমি। যা বিয়ের সময়ে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে থাকেন।
নারীরা খুলা (পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ), মুবারাত (পারস্পরিক সম্মতিতে) অথবা ফাসখ (কাজী/আদালত কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ) এর মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তালাক-ই-আহসান (কাজী/আদালত কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ) এর মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদে, স্বামী ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে বাধ্য। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমান সম্মান, ন্যায়বিচার এবং পারস্পরিক সম্মতির উপর জোর দেয় এবং নির্যাতন, হয়রানি বা অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের অধিকারও দিয়েছে।