Indian National Flag History: ১৯৪৭ সালের ১৪ই অগাস্ট মধ্যরাত্রি! ব্রিটিশ(British Rule) উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হল ভারত। ইংরেজদের পতাকা নামিয়ে তোলা হল সংযুক্ত ভারতের পতাকা। স্বাধীন ভারতের সেই ত্রিরঙাই(Tri Colour) প্রতিটি ভারতাবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের, অত্যন্ত কাছের। স্বাধীনতার আজ ৭৫(Indian Independence) বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে গেছে নানা অনুষ্ঠান। তবে তা অবশ্যই কোভিড রীতি মেনেই চলছে।
অগাস্ট মাস সামনে আসতেই, প্রতিটি ভারতীয়র মনে সেই সব দেশ নায়কদের কথা আসতে শুরু করে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, প্রাণ দিয়েছিলেন। হাজার প্রতিকূলতা, কষ্ট সহ্য করেও দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছিলেন। গোটা দেশের প্রায় প্রতিটি কোনাকে সাজিয়ে তোলা হয় জাতীয় পতাকায়। কিন্তু জানেন কি ভারতের বর্তমান জাতীয় পতাকার ভোল কতবার পাল্টাতে হয়েছিল এর আগে?
আসুন আজ সেই গল্পই করি-
আমরা অধিকাংশ মানুষই জানি যে ভারতের বর্তমান ত্রিরংঙাই একমাত্র জাতীয় পতাকা যেখানে গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ রং রয়েছে। এক একটি রং এক একটি বিষয়ের প্রতীক। কিন্তু বর্তমানের যে ভারতীয় পতাকা বিশ্বজুড়ে দেখা যায়, তা কিন্তু ১৯৪৭ সালে স্থায়ী রূপ পাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছিল।
দেখে নেওয়া যাকে কবে কীভাবে বদলানো হয়েছিল ভারতের পতাকা-
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯০৬- ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ৭ই অগাস্ট, ১৯০৬ সালে। কলকাতার পারসি বাগান(গ্রিন পার্ক) এলাকায়। সেই সময় যে পতাকা উত্তলন করা হয়েছিল তার সঙ্গে বর্তমানের পতাকার কোনও মিল নেই বললেই চলে। সবুজ, হলুদ ও লাল রংয়ের সমন্ময় তৈরি হয়েছিল সেদিনের সেই পতাকা। তাতে স্থান পেয়েছিল সাদা পদ্ম, চাঁদ ও সূর্য। সেই সঙ্গে নীল রং দিয়ে হিন্দিতে লেখা ছিল বন্দেমাতরম।
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯০৭- এই পতাকাটি প্যারিস শহরে প্রথম উত্তোলন করা হয় বিকাজি কামা দ্বারা। পরে তা বার্লিনের একটি সমাজতন্ত্র বিষায়ক আলোচনা সভায় স্থান পায়। ১৯০৬ সালের সঙ্গে কিছুটা তফাৎ দেখা যায় এই পতাকায়। সবুজ, হলুদ ও লাল রংয়ের সমন্ময় থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসে এখানে গেরুয়া, হলুদ ও সবুজ রঙের পতাকা দেখা যায়। তাতে স্থান পায় তারা, চাঁদ, সূর্য এবং ফুল। সেই সঙ্গে হলুদের ওপর কালো রং দিয়ে লেখা বন্দেমাতরম।
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯১৭- ১৯০৭ সালের পর ১০ বছর কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি জাতীয় পতাকায়। এরপর ১৯১৭ সালে ফের একবার নকশায় বদল হয়। এই পতাকাটি উত্তোলন করেন অ্যানি বেসান্ত এবং লোকমান্য় বাল গঙ্গাধর তিলক। লাল ও সবুজের স্ট্রাইপের মধ্যে সপ্তর্ষির ছবি স্থান পায় এখানে। মূলত আইরিশ হোম রুল মুভমেন্টের সময় এই পতাকা সামনে আসে।
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯২১- বেজ়ওয়াদাতে কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন চলার সময় ১৯২১ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যক্তি এই পতাকাটি উপহার দেন গান্ধীজিকে। মূলত তাঁর কথাতেই প্রথমবার ভারতের জাতীয় পতাকাতে হাতে কাটা চরকা এবং সাদা রং ব্যবহার করা হয়। এখানে সাদার পাশাপাশি দুটি রং ব্যবহার করা হয় রাল এবং সবুজ। দুই জাতি হিন্দু ও মুসলমাকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই এই রঙের ব্যহার বলে মনে করা হয়।
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯৩১- বর্তমান পতাকার নকশা চূড়ান্ত হওয়ার আগে শেষ বারের জন্য ১৯৩১ সালে পরিবর্তিত হয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকা। জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে এবার থেকে ভারতের পতাকা হয় ত্রিরঙা। এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের পাতায় উঠে যায়। অবশেষে ওই বছর ৩১ অগাস্ট এই পতাকাটি উত্তলন করা হয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যালয়ে। গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ রঙে সজ্জিত এই পতাকার মাঝখানে রয়েছে চড়কা।
ভারতের জাতীয় পতাকা ১৯৪৭- ২২ জুলাই, ১৯৪৭ সাল। দেশের মাটিতে সৃষ্টি হল ইতিহাস। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেমন হবে ভারতের জাতীয় পতাকা। ততদিনে সবকিছু স্থির হয়ে গিয়েছে। উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হতে চলেছে ভারত। ইংরেজ রাজশক্তি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রমীদের কাছে নতি স্বীকার করেছে। অবশেষে ওই বছর ১৫ অগাস্ট কাউন্সিল হাউজে প্রথম উত্তলন করা হয় বর্তমানের এই জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকায় রয়ছে গেরুয়া রং সবার ওপরে। মধ্যেখানে সাদা এবং তাতে অশোকচক্র। শেষে রয়েছে সবুজ রং। গোটা পতাকাটিই সৌহার্দ্য, শক্তি এবং সাহসের প্রতীক।
প্রসঙ্গত, ভারতের পতাকা এছাড়াও অনেকবার নানা ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি ইতিহাসের পাতায় আসেনি। এই ৬বারের পরিবর্তন ছিল উল্লেখযোগ্য। আর তা রয়েছে রেকর্ডে। (ছবি সৌজন্য :ইন্ডিয়া টুডে)