দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর অবশেষে হার মানল চার বছরের খাদিরা ভানু। প্রায় চার মাস আগে পথকুকুরের হামলায় গুরুতর জখম হয়েছিল কর্ণাটকের ছোট্ট মেয়েটি। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও শেষ পর্যন্ত জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হল।
চলতি বছর ২৭ এপ্রিলের ঘটনা। নিজের বাড়ির সামনেই খেলছিল খাদিরা ভানু। হঠাৎই একটি পথকুকুর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শরীরের একাধিক জায়গায় গুরুতর কামড় বসায় কুকুরটি। শিশুটির মুখেও ছিল ভয়ঙ্কর ক্ষত। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় চার মাস ধরে চলে চিকিৎসা। তবুও শেষ রক্ষা হল না।
জলাতঙ্কে মৃত্যু
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই কামড় থেকেই শিশুটির শরীরে জলাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় শিশুটির। এই ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন : পথকুকুরদের সরানোর নির্দেশ 'অযৌক্তিক', মত পশুপ্রেমীদের, দিলেন বিজ্ঞানসম্মত বিকল্প
কর্নাটকে রীতিমতো চিন্তার বিষয়
কর্নাটকে গত কয়েক বছরে পথকুকুরের হামলার ঘটনা বেড়েছে। রাজ্যের State Surveillance Unit এর সংক্রামক রোগের রিপোর্ট অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে অগাস্ট ২০২৫ এর মধ্যে কুকুরের কামড়ের প্রায় ২.৮৬ লক্ষ কেস রেজিস্টার্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনের জলাতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে।
শুধুমাত্র গত ৪ থেকে ১০ অগাস্টের মধ্যেই কুকুর কামড়ের ৫,৬৫২টি ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরিস্থিতি যে মোটেও হেলাফেলা করার মতো নয়, তা বলাই বাহুল্য।
এহেন প্রেক্ষাপটে নড়েচড়ে বসেছেন সেরাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। আধিকারিকরা বলছেন কুকুরের কামড়ের পর দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে সচেতনতার প্রসারে চালানো হচ্ছে প্রচার অভিযান। জোর দেওয়া হচ্ছে টিকাকরণের উপরও। পাশাপাশি যাঁরা কুকুর পোষেন, তাঁদেরও পোষ্যদের সাবধানে রাখার সুপারিশ করা হচ্ছে।
বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়েও পথকুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ছাত্রীরা
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেঙ্গেরি ক্যাম্পাসে পথকুকুরের কামড়ে দুই কলেজছাত্রী জখম হন। তাঁদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু’জনের অবস্থাই আপাতত স্থিতিশীল।
একদিকে ছোট্ট শিশুর মৃত্যু, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ঘটনা, সব মিলিয়ে পথকুকুর ও জলাতঙ্ক নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত কর্নাটকের প্রশাসন। চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুরের কামড়ের পর দ্রুত চিকিৎসা ও টিকা নেওয়াই একমাত্র উপায়। দেরি হলেই বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
কুকুরপ্রেমীরা কী বলছেন?
কুকুরপ্রেমীদের কথায়, সরকারি উদ্যোগে কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণে জোর দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে আর কুকুরের সংখ্যা না বাড়ে। এর পাশাপাশি রাস্তার কুকুরদের টিকাকরণের মাধ্যমে জলাতঙ্কের সম্ভাবনাও রোধ করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি কুকুর বেশি এমন রাস্তায় শিশুদের সাবধানে রাখা, পাড়ায় 'পাগলা' কুকুর থাকলে সেই বিষয়ে প্রশাসন বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।