গত ২ বছর ধরে অশান্ত উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর। বিজেপি শাসিত সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ইস্তফার দাবি উঠেছে একাধিকবার। কিন্তু বীরেন চেয়ার ছাড়েননি। দিল্লিতে বিজেপির জয়ের ঠিক পরের দিন, রবিবার রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র দিলেন বীরেন। রাজভবনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র, মণিপুর সরকারের মন্ত্রী এবং বিধায়করা। তার আগে এ দিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বীরেন সিং। এদিকে, রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
দীর্ঘদিন ধরেই বীরেন সিংকে নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। গত বছরের অক্টোবরে মণিপুরের ১৯ জন বিজেপি বিধায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে এন বীরেন সিংকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন বিধানসভার স্পিকার থোকচোম সত্যব্রত সিং, মন্ত্রী থোঙ্গাম বিশ্বজিৎ সিং এবং ইউমনাম খেমচাঁদ সিং। চিঠিতে লেখা হয়েছিল, মণিপুরের মানুষ বিজেপি সরকারকে প্রশ্ন করছে যে কেন এখনও রাজ্যে শান্তি ফেরেনি। শীঘ্রই কোনও সমাধান না হলে বিধায়কদের পদত্যাগের দাবি উঠবে।
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
রাজ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে বীরেন সিং-এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। ক্ষুব্ধ বিধায়কদের চিঠির আগে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করছিলেন বীরেন সিং। বলেছিলেন, 'আমি কেন পদত্যাগ করব?' আমি কি কিছু চুরি করেছি? আমার বিরুদ্ধে কি কোনও কেলেঙ্কারি অভিযোগ রয়েছে? আমি কি জাতি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছি?' তবে বিরোধীদের দাবি, বীরেন সিংয়ের জন্যই হিংসা চরম আকার নিয়েছিল। যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে পারেননি। কুকি সংগঠনের দাবি ছিল, সংঘর্ষে থামাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল না বীরেনের। মেইতেই সম্প্রদায়ের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন।
মণিপুরে ২ বছর ধরে হিংসা
প্রায় ২ বছর ধরে একের পর এক হিংসার ঘটনায় দীর্ণ মণিপুর। সে রাজ্যে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। হাজার হাজার বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকছেন ত্রাণ শিবিরে। জমি, সংরক্ষণ এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিরোধ। একটি সম্প্রদায়ের প্রতি রাজ্যে সরকার পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছে আর একটি সম্প্রদায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীও মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও হিংসার ঘটনা ঘটেই চলেছে। যার জেরে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ভূমিকাও।