বর্ষা ঢুকল দেশের মূল ভূখণ্ডে। কেরলে প্রবেশ করেছে বর্ষা। ২০০৯ সালের পর এই বছরই নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষা ঢুকেছে দেশের মূল ভূখণ্ডে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার কেরলে বর্ষা তার স্বাভাবিক আসার তারিখ ১ জুনের চেয়ে ৮ দিন আগেই এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ১৬ বছর পর কেরলে বর্ষা ঢুকল স্বাভাবিক আসার তারিখের চেয়ে অনেক আগে। রাজ্যে শেষবার এত তাড়াতাড়ি বর্ষা এসেছিল ২০০৯ এবং ২০০১ সালে। এই দুই বছরে ২৩ মে কেরলে বর্ষা প্রবেশ করেছিল। কেরলে বর্ষা আসার স্বাভাবিক তারিখ ১ জুন। তবে, ১৯১৮ সালের ১১ মে প্রথম আগমন রেকর্ড করা হয়েছিল। অন্যদিকে, দেরিতে শুরু হওয়ার রেকর্ড ছিল ১৯৭২ সালে, যখন ১৮ জুন বর্ষা ঢকেছিল।
গত ২৫ বছরের মধ্যে, সবচেয়ে বিলম্বিত আগমন ঘটে ২০১৬ সালে, যখন বর্ষা ৯ জুন কেরলে প্রবেশ করে। গত বছর কেরলে বর্ষা এসেছিল ৩০ মে। ২০২৩ সালে ৮ জুন দক্ষিণের এই রাজ্যে প্রবেশ করেছিল দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। এছাড়াও আইএমডি-র তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ২৯ মে, ২০২১ সালের ৩ জুন, ২০২০ সালের ১ জুন, ২০১৯ সালের ৮ জুন এবং ২০১৮ সালের ২৯ মে কেরলে বর্ষা ঢুকেছিল।
গত কয়েকদিন ধরে কেরলে বর্ষাকাল শুরুর জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর সংমিশ্রণের কারণে কেরলের বেশ কয়েকটি অংশে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার কেরল, উপকূলীয় এবং দক্ষিণ কর্নাটক এবং কঙ্কন এবং গোয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস হতে পারে। ২৯ মে পর্যন্ত কেরল এবং উপকূলীয় কর্নাটকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে ৪০-৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়া বইবে। তামিলনাড়ু, তেলঙগানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও আগামী পাঁচদিন ধরে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড় বৃষ্টি হতে পারে।
বর্ষার আগমন সাধারণত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা নিয়ে আসে। বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে, যা ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড। সময়মতো বৃষ্টিপাত ভূগর্ভস্থ জলের স্তর উন্নত করে, জলাশয় ভরাট করে এবং ধান, ডাল, তৈলবীজ, তুলা এবং শাকসবজির মতো খরিফ ফসলের আগাম বপনে সহায়তা করে। এই সবকিছুই খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ আয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে বর্ষার আগমন উৎসাহব্যঞ্জক হলেও আসল প্রভাব নির্ভর করবে আগামী সপ্তাহগুলিতে সারা দেশে বর্ষার অগ্রগতি কতটা স্থির এবং সমানভাবে হবে তার উপর। খরিফ ফসলের বাম্পার ফলনের জন্য সারা দেশে বর্ষার সমান বিস্তার এবং বৃষ্টিপাত অপরিহার্য।
যদি বর্ষা তার গতি বজায় রাখে এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি মধ্য ও উত্তর ভারতে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাহলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে। বর্ষার আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমডি কেরলের বেশ কয়েকটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে। যেখানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আরও কয়েকটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেখানে ১১ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। আইএমডি ৬ সেন্টিমিটার থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকা অঞ্চলগুলির জন্য হলুদ সতর্কতাও জারি করেছে।