
১৯৬৫ সালে, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে হিমালয়ের অন্যতম উচ্চ শৃঙ্গ নন্দাদেবীতে চলেছিল এক গোপন অভিযান। যার প্রভাব এত বছর পর দেখা যেতে পারে গঙ্গায়। দেশের প্রধান নদীতে মিশতে পারে পরমাণু নিষ্ক্রিয় নানা পদার্থ। খোদ বিজ্ঞানীরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনাটি কী?
আসলে আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে আমেরিকান এবং ভারতীয় পর্বতারোহীদের নিয়ে একটি বিশেষ দলকে হিমালয়ে পাঠিয়েছিল মার্কিন বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা CIA। এই দলের মূল কাজ ছিল চিনের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করা। ১৯৬৪ সালে চিন প্রথম পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালায়। মনে করা হয়, এই পদক্ষেপের পরেই আতঙ্কিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নেয়।
এই দলটি নন্দী দেবীর উপরে SNAP-19C নামে একটি বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছিল। এই পরমাণু জেনারেটরটির কাজ ছিল, চিন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করলে, সেটির রেডিয়েশন ধরে মার্কিন মুলুকে সরাসরি খবর পাঠিয়ে দেওয়া। বিশেষ বিষয় হল, এই ডিভাইসটির ওজন ছিল প্রায় ৫০ পাউন্ড এবং এতে প্লুটোনিয়াম-২৩৮ ও ২৩৯ (তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক উপাদান) ছিল। এই উপাদানের পরিমাণ ছিল নাগাসাকি বোমায় ব্যবহৃত প্লুটোনিয়ামের এক তৃতীয়াংশ।
কীভাবে বিপত্তি ঘটে?
গোটা অভিযানটাই চালানো হচ্ছিল বৈজ্ঞানিকদের ছদ্মবেশে, চিনের অগোচরে। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে পর্বতারোহীদের দল যখন নন্দাদেবীর চূড়োর কাছাকাছি পৌঁছায়, তখনই আবহাওয়ার অবনতি ঘটে। আঘাত হানে ভয়াবহ তুষারঝড়। বেগতিক দেখে সব সরঞ্জাম ওখানেই একটি বরফাবৃত গুহায় ফেলে ফিরে আসে দলটি।
এর ঠিক কয়েকমাস পরে ১৯৬৬ সালে পর্বতারোহীরা আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে যখন ডিভাইসটির খোঁজ করে। ততক্ষণে ঘটে গিয়েছে বিপত্তি। ভয়াবহ তুষারঝড়ে ডিভাইসটি যে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে, তার আর খোঁজ মেলেনি।
গঙ্গার বিপদ কোথায়?
গঙ্গা নদীতে যে জল প্রবাহিত হয়, তার বিরাট অংশ আসে নন্দা দেবী হিমবাহ থেকেও। সারা দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ গঙ্গার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মুশকিল হল, প্লুটোনিয়াম অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। যা ক্যান্সার, হাড় এবং ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, নদীতে জল এতই বেশি রয়েছে যে দূষণের আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে যদি ডিভাইসটি বিস্ফোরিত হয়, তবে তা স্থানীয় বাসিন্দাদের (পার্বত্য এলাকার) জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। এমনকী, গঙ্গা নদীর জলে যদি ওই পদার্থ মেশে তবে সারা দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
এখন কি কোনও প্রভাব রয়েছে?
২০২১ সালে হিমালয়ে একটি বড়সড় তুষারধসের ঘটনা ঘটেছিল। এই ধসে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০০ লোকের। অনেকেই মনে করেন, এমন ঘটনার জন্য আসলে দায়ী ওই পরমাণু ডিভাইসটিই। যদিও এর কোনও সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ডিভাইসটি যে এখনও ওই হিমবাহের মধ্যে কোথাও আটকে রয়েছে, তা অসম্ভব নয়। আর যেহেতু জিনিসটি পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন তাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও অতি ক্ষীণ।