ঠিক যেন মালায়লম ক্রাইম থ্রিলারের এক চিত্রনাট্য! কেরলের পালাক্কড় জেলার নেনমারায় ঘটে গেল এক রোমহর্ষক ঘটনা, যেখানে ছ’বছরের ব্যবধানে এক ব্যক্তি তিনটি খুন করল। প্রথমে নিজের প্রতিবেশীর স্ত্রীকে হত্যা করে জেলে যায় সে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফিরে এসে খুন করল একই পরিবারের আরও দুজনকে—তার আগের শিকার মহিলার স্বামী ও শাশুড়িকে। পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে ধরা পড়েছে অভিযুক্ত চেন্থামারা।
প্রথম খুন: ছ’বছর আগের ট্র্যাজেডি
২০১৯ সালে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত হন এক গৃহবধূ, সাজিতা। তদন্তে উঠে আসে প্রতিবেশী চেন্থামারার নাম। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সে জেলে যায়। কিন্তু কিছুদিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আসে।
ফের খুন: প্রতিশোধ না ভয়?
এলাকায় ফিরে আসার পর থেকেই চেন্থামারা মনে করেছিল, সাজিতার স্বামী সুধাকরণ তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে। অভিযোগ, সুধাকরণের দ্বিতীয় স্ত্রী নাকি তার ক্ষতি করার জন্য ঝাড়ফুঁক করত—এই বিশ্বাস থেকেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে সে। শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই পরিকল্পনা করে খুনের।
সোমবার রাতে সুধাকরণের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় চেন্থামারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁকে। পরে একই কায়দায় হত্যা করে সুধাকরণের মাকেও।
জঙ্গলে পলাতক, পুলিশের বুদ্ধিতে ধরা পড়ে অভিযুক্ত
খুনের পর জঙ্গলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। পুলিশ তার খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চালায়, কিন্তু চেন্থামারা এলাকার চেনাজানা পরিবেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এক কৌশল নেয়—তল্লাশি শেষের ঘোষণা করে ফাঁদ পাতে।
৩০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকা চেন্থামারা পুলিশের কথা বিশ্বাস করে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অন্যত্র পালানোর চেষ্টা করে। আর ঠিক তখনই ওঁত পেতে থাকা পুলিশ বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ: কীভাবে জামিন পেল অভিযুক্ত?
এই রোমহর্ষক ঘটনার পর নেনমারার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান এবং প্রশ্ন তোলেন—কীভাবে এমন এক অপরাধী জামিন পেল? কেন আগাম সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও সুধাকরণের অভিযোগ আমল পেল না?
পরিবারের আর্তনাদ
সুধাকরণের দুই কন্যা, অখিলা ও অতুল্যা, মা-বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, যদি চেন্থামারাকে সময়মতো শাস্তি দেওয়া হতো, তবে তাঁদের বাবা-মা আজও বেঁচে থাকতেন।
পুলিশি তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ চেন্থামারাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তিনটি হত্যাকাণ্ডের দায়ে তার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।