পাকিস্তানের হেফাজতে কাটানো ২০ দিনের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা অবশেষে প্রকাশ্যে আনলেন বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণম কুমার শাউ। ভুলবশত আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার পর পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। ১৪ মে পাকিস্তান তাঁকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলেও, এই কুড়ি দিন যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে, তা এখন এক একটি অগ্নিপরীক্ষার কাহিনি হয়ে উঠেছে।
‘চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া, ঘুমাতে না দেওয়া, বারবার স্থান পরিবর্তন’ — নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানি হেফাজতে থাকা অবস্থায় শা-কে শারীরিক ও মানসিকভাবে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। দাঁত ব্রাশ করতেও দেওয়া হয়নি, ঘুমাতে দেওয়া হয়নি, এবং প্রতিনিয়ত স্থান বদল করে নিয়ে যাওয়া হতো তাঁকে — তাও চোখ বেঁধে। কখনও তাঁকে জেলে রাখা হয়, আবার কখনও বিমানঘাঁটির পাশে নিয়ে গিয়ে সেখানে যুদ্ধবিমানের শব্দ শুনিয়ে ভয় দেখানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসাররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিলেন সাধারণ বেসামরিক পোশাকে। তাঁকে বিএসএফ ও আইবি’র (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) উচ্চপদস্থ অফিসারদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সমস্ত জিজ্ঞাসাবাদ এবং মানসিক চাপে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
জঙ্গি হামলার পর সীমান্ত পার, তারপর বন্দিত্ব
পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে নিযুক্ত কনস্টেবল শাউ ১৬ বছর ধরে বিএসএফ-এ কর্মরত। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরের দিন সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় তিনি ভুলবশত আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে পৌঁছে যান। তখন থেকেই তিনি পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের হেফাজতে ছিলেন। উল্লেখ্য, এই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে জঙ্গিদের আস্তানায় তীব্র আঘাত হানে। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। এই প্রেক্ষাপটে, সীমান্তে উত্তেজনার আবহে শা-র নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কাছে আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ফেরত এলেও ক্ষত রয়ে গেল
১৪ মে সকালে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আটারি ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার শা-কে ভারতের হাতে তুলে দেয়। নিয়ম মাফিক, বিএসএফ তাঁর পোশাক ধ্বংস করেছে এবং তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বর্তমানে তিনি দেশে ফিরলেও, এই ২০ দিনের বন্দিত্ব তাঁর শরীর ও মন দুইয়ের উপরই গভীর প্রভাব ফেলেছে। দেশের এক সৈনিকের এই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সীমান্তে কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাতে হয় আমাদের জওয়ানদের।