১০ গ্রাম, ২০ গ্রাম বা ৫০ গ্রামের স্বর্ণমুদ্রা হয়তো দেখেছেন, কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার মুদ্রার ওজন কি জানেন? বিশ্বের বৃহত্তম সোনার মুদ্রার ওজন প্রায় ১২ কেজি এবং মজার বিষয় হল সেটি ভারতেই তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই মুদ্রা বিলুপ্ত হলেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই জিনিস ভারতের রাজা-নবাবদের ভল্টের গৌরব বাড়িয়েছে। বর্তমানে আবার নতুন করে এই মুদ্রার খোঁজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
নিলামের চেষ্টা হয়েছিল
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ৪ দশক আগেও এই সোনার মুদ্রার খোঁজ শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও তখন তা খুঁজে বের করতে পারেনি সিবিআই। এটি শেষবার হায়দরাবাদের রাজ পরিবারের Titular Nizam VIII of Hyderabad Mukarram Jah-এর কাছে দেখা গিয়েছিল। তিনি সেটি সুইস ব্যাঙ্কে নিলাম করার চেষ্টা করেন। জাহ এই মুদ্রা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন শেষ নিজাম তথা তাঁর দাদা মীর ওসমান আলি খানের কাছ থেকে। যদিও সিবিআই সেই নিলামের সময় এটি সনাক্ত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি।
জাহাঙ্গির তৈরি করেছিলেন মুদ্রাটি
শোনা যায় ওই মুদ্রাটি সম্রাট জাহাঙ্গির তৈরি করেছিলেন। এইচকে শেরওয়ানি সেন্টার ফর ডেকান স্টাডিজের এক ইতিহাসবিদ এবং অধ্যাপক সালমা আহমেদ ফারুকীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালে জেনেভায় এটি নিলাম করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ইউরোপে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে ওই নিলামের তথ্য ছিল। হ্যাবসবার্গ ফেল্ডম্যান এসএ প্যারিসের ইন্দোসুয়েজ ব্যাংকের জেনেভা শাখার সহায়তায় এই মুদ্রাটি নিলাম করার চেষ্টা করছিলেন। সিবিআই বিষয়টি নিজেদের হাতে নেয়। তদন্ত শুরু হয় এবং অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে, কিন্তু মুদ্রার হদিস পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সিবিআই আধিকারিকেরা ইতিহাসবিদদের কাজ করেছেন। সেই তদন্তে জড়িত অনেক সিবিআই অফিসার এখন অবসর নিয়েছেন, তাই তদন্তের এখনও কিনারা হয়নি। সিবিআই-এর প্রাক্তন যুগ্ম পরিচালক শান্তনু সেনও তাঁর বইয়ে এই মুদ্রার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্রাট জাহাঙ্গির এই ধরনের দুটি মুদ্রা তৈরি করেছিলেন। একটি মুদ্রা ইরানের শাহের দূত ইয়াদগার আলিকে দেওয়া হয় এবং অন্য মুদ্রা হায়দরাবাদে নিজামের কাছে পৌঁছায়।
সংবাদে অধ্যাপক সালমাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্ত ইউনিট একাদশ ১৯৮৭ সালে অ্যান্টিক অ্যান্ড আর্ট ড্রেজার্স আইনের অধীনে একটি মামলা দায়ের করেছিল। তদন্তে জানা যায়, মুকাররম জাহ ১৯৮৭ সালে সুইস নিলামে দুটি সোনার মোহই বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই মুদ্রার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শান্তনু সেন তাঁর বইতে বলেছেন যে ব্যাঙ্ক এবং মোকাররম জাহের মধ্যে কথোপকথনে ঋণের পরিবর্তে দুটি মুদ্রা বন্ধক রাখার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন বহু বছর পার হয়ে গেলেও ঐতিহাসিক মুদ্রার কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর আশা, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রচেষ্টা কিছুটা সাফল্য পাবে।
আরও পড়ুন - COVID চতুর্থ ঢেউ? দেশে ১৭ হাজার পার আক্রান্ত, বাংলাতেও শোচনীয়