দিল্লি এনসিআরেই শুধু বাজি নিষিদ্ধ কেন? দেশের বাকি সব শহরের মানুষের কি শুদ্ধ বাতাসের প্রয়োজন নেই? শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তুললেন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। তাঁর কথায়, 'দেশের প্রতিটি মানুষই তো দিল্লিবাসীর মতোই শুদ্ধ বাতাস পাওয়ার অধিকার রাখেন।' প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, 'আমরা শুধু দিল্লির জন্য আলাদা নীতি তৈরি করতে পারি না। তাঁরা দেশের অভিজাত নাগরিক জাতীয় কিছু নন। আমি গত বছর শীতে অমৃতসরে ছিলাম। সেখানকার দূষণের পরিস্থিতি দিল্লির থেকেও খারাপ ছিল। বাজি যদি নিষিদ্ধ করতেই হয়, তবে সারা দেশেই তা করতে হবে।'
আদালতে সিনিয়র আইনজীবী অপরাজিতা সিংহও বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণ সমর্থন করেন। তাঁর মন্তব্য, 'অভিজাতরা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নেন। দূষণ বাড়লে দিল্লি ছেড়ে বাইরে চলে যান।'
এই প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত সারা দেশে বাজি নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে CAQM (কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট)-কে নোটিস জারি করেছে।
দীপাবলির আগে আদালতের এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ উত্তর ভারতের বহু জেলায় অক্টোবর-নভেম্বরে দূষণের মাত্রা মারাত্মক হারে বাড়ে। তার অন্যতম বড় কারণ হন বাজি এবং খড় পোড়ানো।
গত কয়েক বছরে দীপাবলির আগে বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কখনও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা, কখনও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাজি পোড়ানোর অনুমতি, আবার কখনও বাজি বিক্রি ও মজুতের উপর কঠোর নিয়ম চাপানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক নির্দেশাবলী:
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪: দিল্লি সরকার শহরে বাজি তৈরি, মজুত, বিক্রি ও পোড়ানোয় ১২ মাসের জন্যই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫: সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দিল্লি ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার এনসিআর সংলগ্ন জেলাগুলিতেও বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ।
৩ এপ্রিল, ২০২৫: আদালত জানায়, মাস হিসাবে ছাড়ের প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি 'গ্রিন ক্র্যাকার' এর ক্ষেত্রেও ছাড় নেই। অর্থাৎ এনসিআরে সারাবছরই এখন বাজি নিষিদ্ধ।
মে, ২০২৫: আদালত নির্দেশ দেয়, এনসিআর সংলগ্ন সব রাজ্যকেই পরিবেশ সুরক্ষা আইনের ৫ নম্বর ধারা মেনে বাজি নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্দেশ না মানলে আদালত অবমাননার মামলা চলবে।
পশ্চিমবঙ্গেও কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো যাবে না?
যদি ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্ট সারা দেশে বাজি নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দেয়, সেক্ষেত্রে বাজি পোড়ানো তো দূর অস্ত, বাজি তৈরি, মজুদ বা বিক্রিও করা যাবে না। শুধু শব্দবাজি না, ফুলঝুরি থেকে তুবড়ি, রকেট, সবই 'ব্যান' হয়ে যাবে। সব রাজ্যকেই এনসিআরের মতো কঠোর নিয়ম লাগু করতে হবে। আর তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও পড়বে।
এর ফলে বাজি তৈরি, বিক্রি, মজুত ও পোড়াতে গিয়ে ধরা পড়লে পরিবেশ সুরক্ষা আইনের আওতায় কড়া শাস্তি ও মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে।