পুজোর ব্যস্ততা শুরু হচ্ছে। আশ্বিনের শারদ প্রাতে আলোকবেণু বাজতে আর কয়েকদিন অপেক্ষা। বলা যায়, পুজোর আর মাস দেড়েক বাকি। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক।
মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে। এদিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত।
অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।
আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত। রথের দিন কাঠামো পুজো হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। যেহেতু মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়, তাই পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়। তবে বর্তমানে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তাই অনেক শিল্পীরা কাজের সুবিধার জন্য মহালয়ার আগেও চক্ষু আঁকেন দুর্গার। তবে একথা বলাই বাহুল্য মহালয়ায় চক্ষুদানের গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক। এদিনেরই পর থেকে ঢাকে কাঠি পড়ে যায় দুর্গাপুজোর।
মহালয়া ২০২৫ দিনক্ষণ
* এই বছর মহালয়া পড়েছে ২১ অক্টোবর (৪ আশ্বিন), রবিবার।
* মহালয়ার অমাবস্যা তিথি শুরু ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১/৫৪ মিনিট নাগাদ এবং থাকবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২/২৩/৪৬ মিনিট পর্যন্ত।
মহালয়ার দিন ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর শোনার রীতি বাঙালির যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মহালয়ার আগে ১৫ দিন চলে পিতৃপক্ষ। এবার পিতৃপক্ষ শুরু হবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে।
উমার মর্তে আগমনের আগে পিতৃপক্ষের শেষে পিতৃ তর্পণ ঘিরে হিন্দু ধর্মে নানা রীতিনীতি রয়েছে। শাস্ত্র মতে কোনও মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ শান্তি করলে, তাঁর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এবং সেই আত্মা মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। মহালয়া কেটে যাওয়া মানে দুর্গা পুজোর আর ঠিক এক সপ্তাহ। চারিদিকে পুরদস্তুর শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি ও উদযাপন।