বছরভর নানা অনুষ্ঠান উদযাপন পালন করেন ভারতবাসী। সনাতন ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল রথযাত্রা। ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে মূলত এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ধুমধাম করে রথযাত্রার উৎসব পালিত হয় পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে। এছাড়াও যে সমস্ত মন্দিরে ও বনেদি বাড়িতে জগন্নাথদেব আছেন, সেখানেও ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব।
শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব। সেই উপলক্ষ্যে ওই তিথি মেনে গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজন হয়। এই যাত্রাকে সোজা রথ যাত্রা বলা হয়। এর সাত দিন পর, মন্দির থেকে দেবতার ফিরতি যাত্রাকে উল্টোরথ যাত্রা বলা হয়। যদিও মাসির বাড়ি যাওয়া নিয়ে রথ যাত্রার আরও এতটি পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়।
পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন হওয়া খুব শুভ বলে বিবেচিত। রথ দেখার জন্য ফি বছর ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থী। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কোনও ব্যক্তি যদি রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অংশ নেন, তাহলে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে উঠতে পারেন তিনি। জগন্নথধাম পুরী ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক কাহিনি। রইল,পুরীর রথযাত্রার কিছু অজানা তথ্য।
মাসির বাড়ি
স্নান যাত্রার পর নিভৃতবাস থেকে বেরিয়ে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথদেব। এর সাতদিন পরে তাঁরা যখন ফিরে আসেন, সেই উল্টো রথ বা পূর্ণ যাত্রা।
সহযাত্রী
রথযাত্রায় জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে সহযাত্রী হিসেবে থাকেন অন্যান্য দেব-দেবী। জগন্নাথের সঙ্গে থাকেন মদনমোহন, বলরামের সঙ্গে থাকেন রামকৃষ্ণ এবং শুভদ্রার সঙ্গে থাকেন সুদর্শনা।
তিন ধরনের কাঠ
ফাসি, ভাউনরা, আসানা মূলত এই তিন ধরনে কাঠের প্রয়োজন হয় রথ নির্মাণে। শোনা যায় পুরীর রথের নির্মাণে ১,১০০ বড় কাঠের প্রয়োজন হয়। যা ১২ ধরনের কাঠ থেকে আসে এবং সেখান থেকেই ৮ ফুটের বিশেষ ৮৬৫ টি গুঁড়ি বেছে নেওয়া হয়।
আলাদা রথ
রথযাত্রায় জগন্নাথ, শুভদ্রা, বলরামের তিনটি আলাদা রথ তৈরি করা হয়। এই রথের আবার আলাদা নাম থাকে। জগন্নাথের রথটির নাম নন্দীঘোষ, বলরামের রথটির নাম তলধ্বজ এবং শুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।
রথের চাকা
তিন ভাই বোনের তিনটি রথের চাকার সংখ্যাও আলাদা। জগন্নাথের রথের ১৬ টি চাকা, বলরামের রথে ১৪ টি এবং শুভদ্রার রথের ১২ টি চাকা থাকে।
রথের রং
তিনটি রথের রংও আলাদা হয়। জগন্নাথের রথের রং হয় লাল-হলুদ। এটি মূলত বিষ্ণুর পছন্দের রং। অন্যদিকে বলরামের রথের রং লাল-সবুজ এবং শুভদ্রার রথ লাল -কালো রঙের।
রথের ঘোড়া
তিনটি রথের ঘোড়ারও আলাদা নাম রয়েছে। যেমন জগন্নাথ দেবের রথের চারটি ঘোড়ার নাম শঙ্খ, বলহাকা, শ্বেতা, হরিদশ্ব। বলরামের চারটি ঘোড়ার নাম তীব্র, ঘোড়া, দীর্ঘশর্মা, স্বরনাভ। শুভদ্রার চারটি ঘোড়ার নাম রুচিকা, মোচিকা, জিতা ও অপরাজিত।
ঘোড়ার রং
ঘোড়ার রঙও হয় ভিন্ন। জগন্নাথের রথের জন্য থাকে সাদা রঙের ঘোড়া, বলরামের রথের জন্য কালো এবং শুভদ্রার রথের জন্য লাল রঙের ঘোড়া থাকে।
রথের সারথী
জগন্নাথ,বলরাম ও শুভদ্রার তিনটি রথের সারথীর নাম মাতালি, দাঁড়ুকা ও অর্জুন।
রথযাত্রা ২০২৫-র দিনক্ষণ
* রথযাত্রা - ২৭ জুন (১২ আষাঢ়), শুক্রবার। ২৬ জুন বেলা ২/৩৯/৫৮ থেকে ২৭ জুন বেলা ১/১৮/২৩ পর্যন্ত থাকবে দ্বিতীয়া তিথি।
* উল্টো রথযাত্রা (পুনর্যাত্রা) - ৫ জুলাই (২০ আষাঢ়), শনিবার।
* মাহেন্দ্রযোগ- দিবা ঘ ৫|৫৬ গতে ৬৪৯ মধ্যে ও ৯|২৯ গতে ১০|২২ মধ্যে।
* অমৃতযোগ- দিবা ঘ ১২|৯ গতে ২|৪৯ মধ্যে এবং রাত্রি ৮|৩০ মধ্যে ও ১২|৪৬ গতে ২|৫৫ মধ্যে ও ৩|৩৭ গতে ৪|৫৮ মধ্যে।
পুরীর রথযাত্রার সূচী
* পুরীতে নয় দিনের জগন্নাথ রথযাত্রার উৎসব চলবে ২৭ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত।
* স্নান পূর্ণিমা: ১২ জুন, ২০২৫
* অনবসর (বিশ্রামের সময়): ১৩-২৬ জুন, ২০২৫
* গুন্ডিচা মার্জানা (মন্দির পরিষ্কার): ২৬ জুন, ২০২৫
* রথযাত্রা: ২৭ জুন, ২০২৫
* হের পঞ্চমী: ১ জুলাই, ২০২৫
* বহুদা যাত্রা (রথযাত্রার প্রত্যাবর্তন): ৪ জুলাই, ২০২৫
* সুনা বেসা (দেবতাদের সোনালী পোশাক): ৫ জুলাই, ২০২৫
* নীলাদ্রি বিজয়া (মূল মন্দিরে প্রত্যাবর্তন): ৫ জুলাই, ২০২৫