সামনেই কালীপুজো, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে তার প্রস্তুতি। শ্যামা মায়ের আরাধনায় যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে তাই তার চেষ্টা চলছে জোড়কদমে।
তবে শুধু ভারতেই নয় দেবী শক্তির আরাধনায় পিছিয়ে নেই মার্কিন মুলুকও। সারা বছরই বিদেশেও নিষ্ঠা করে পালন করা হয় কালীপুজো। আসুন জানা যাক বিস্তারিত।
কলকাতার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের মত সুদূর ক্যালিফোর্নিয়ার মা ভবতারিণী মন্দির গোটা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার এলিজাবেথ উসা হার্ডজ, মা ভবতারিণীকে ১১৯৩ সালে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানলাভের জন্যে কলকাতা থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার লাগুনা বিচে।
এই মন্দিরে শুধুমাত্র যে মায়ের মূর্তির নিত্য পূজা হয় তা নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে সেখানে ধর্মীয় আলোচনা ও পড়াশোনা চলে। তার সঙ্গে নিয়মিত চলে কীর্তন ও শ্লোক পাঠ। কলকাতার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির এর মতো একই রকমভাবে সেখানে মা ভবতারিণী পূজিত হন।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই দক্ষিণেশ্বরী কালী মন্দিরে শুধুমাত্র যে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা যান, তা নয়। এই মন্দিরের দরজা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা বিশ্বের জন্যে খোলা।
মন্দিরটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল শ্রী রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ও সর্বজনীন শিক্ষার উপর।
শ্রী রামকৃষ্ণের বাণী "ভিন্ন ধর্ম শুধুমাত্র একই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর ভিন্ন পথ,"- এই মতাদর্শে বিশ্বাস করে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে একই সঙ্গে পূজিত হন প্রভু যীশু, গৌতম বুদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের প্রাণ পুরুষেরা।
ওয়াশিংটনের কালী মন্দিরটি ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক একটি কেন্দ্র যেখানে আধ্যাত্মিকতা আরও গভীর হয়।
ওয়াশিংটন মহানগরীর ভারতীয় সম্প্রদায়ভুক্তরা মেরিল্যান্ডে কালী মন্দির এবং নিজস্ব মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তাঁদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছিলেন।
বৈদিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে এই মন্দিরটি ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতার আদ্যাপীঠের প্রধান ব্রহ্মচারী মুরাল ভাই, সহ-সভাপতি ব্রহ্মচারী সুব্রত ভাই এবং কলকাতার প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত এবং আদ্যাপীঠের প্রধান পন্ডিত দীননাথ ত্রিপাঠি মন্দিরটির শুচি করেন।
ওয়াশিংটন কালী মন্দির এবং মানব উন্নয়ন কেন্দ্রটিতে শুধুমাত্র কালী নয়। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, শিব, বারো জ্যোতির্লিঙ্গ, রাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ এবং নবগ্রহ মন্দির রয়েছে। নিয়মিত পূজা ছাড়াও এখানে ধর্মীয় আলোচনাও করা হয়।
স্থানীয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী ডঃ প্রদীপ ঘোষ এই মন্দিরটির স্থাপন করেন।
প্রায় চার একর জমির ওপর তৈরি এই মন্দিরে প্রতি বছর শীতকালে বরফে ঢেকে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা এখানে আসেন পুজো দিতে ও দর্শন করতে।
শিকাগোল্যান্ডের শিকাগো কালীবাড়ি একটি হিন্দু মন্দির যেখানে ধর্মীয় উপাসনা, আধ্যাত্বিক উন্নতি শেখা ও ভাগ করে নেওয়া এবং একে অপরকে সহায়তা করার কেন্দ্র হিসেবে মনে করা হয়।
২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর রাম চক্রবর্তী, আমেরিকার শিকাগো শহরে শিকাগো কালীবাড়ি স্থাপন করা হয়।
প্রত্যেকদিন মন্দিরটি খোলা থাকে যাতে ভক্তেরা ঈশ্বরের কাছে আধ্যাত্বিক আরাধনা করতে পারেন এছাড়াও শিকাগো কালীবাড়িতে সমস্ত বড় হিন্দু সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন করা হয়।
১৮৯৩ সালে শিকাগো দ্বারা আয়োজিত বিশ্ব কলম্বিয়ান প্রদর্শনের সময়ে ধর্মের প্রথম সংসদ জড়ো হয়েছিল। ভারতীয় স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু আধ্যাত্মিকতা দরজা পশ্চিমে উন্মুক্ত করেছিলেন এই সময়।
শিকাগো কালীবাড়ি সমস্ত মানুষকে একাত্ম করার প্রচেষ্টা করে। এছাড়াও হিন্দুধর্ম কেন্দ্রিক নৈতিকতার মাধ্যমে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা সরবরাহ করা হয় এখানে।
বিশেষ দিনে ও তিথিতে মা কালীকে ভিন্ন পদের ভোগ অর্পণ করা হয় এই মন্দিরে।