শ্রাবণ মাসে পূণ্য অর্জনের জল ঢালতে গিয়ে কোচবিহারের ১০ যুবকের তড়িদাহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে শিরোনামে উঠে এসেছে জলপাইগুড়ির শিবতীর্থ জল্পেশ মন্দির। তবে এর আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতি বছর এমনকী সারা বছর দেশ-বিদেশের ভক্তরা এখানে আসেন জল ঢালতে। আসুন জেনে নিই জল্পেশ মন্দিরের সম্পর্কে।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থেকে আরও ৭-৮ কিলোমিটার দূরে জর্দা নদীর ধারে জল্পেশ মন্দির অবস্থিত। ভ্রামরী শক্তিপীঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ।মন্দিরটি মনোরম স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত।
এখানকার শিবলিঙ্গ হল জল লিঙ্গ। অর্থাৎ শিবলিঙ্গ এখানে গর্তের মধ্যে থাকে। যাকে অনাদিও বলা হয়। গর্তে জল ঢেলেই পূণ্য অর্জন করতে হয়।
কোচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহ ১৫২৪ সালে জল্পেশ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা করেন। বিশ্বসিংহ কোচবিহারের মহারাজা নর-নারায়ণের পিতা ছিলেন। পরবর্তীকাল তিনি ১৫৬৩ সালে নর-নারায়ণ মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।
আবার ১০০ বছর পর রাজা প্রাণ-নারায়ণ ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর কোচবিহারের রাজা লক্ষ্মী নারায়নের রাজত্বকালে কোচ রাজবংশের বশ্যতা অস্বীকার করার পর ১৬২১ খ্রিস্টাব্দে মহীদেব রায়কত তার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কোচরাজাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে অস্বীকার করেন।
এরপর থেকে মন্দিরটি বৈকুণ্ঠপুরের রায়কতদের তত্ত্বাবধানে ছিল। ১৮৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজা জগেন্দ্র দেব রায়কতের স্ত্রী রানী জগদেশ্বরী দেবী এর পুনপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন
মহাশিবরাত্রিতে এই মন্দিরটির উদযাপিত প্রধান উৎসব। জুলাই-অগাস্ট মাসে এবং শিবের কাছে বিশেষ পুজো করার জন্য ফেব্রুয়ারি-অগাস্ট মাসে শ্রাবণী মেলায় তীর্থযাত্রীরা আসেন।
সপ্তদশ শতকে মন্দির তৈরির পর থেকেই এখানে শিবরাত্রিতে বিখ্যাত মেলার সূচনা। সেই দিক থেকে মেলাটি গোটা রাজ্যেরই প্রাচীন মেলাগুলির অন্যতম। মেলাতে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হয়।
ডুয়ার্স যখন ভুটানের অংশ ছিল, তখন ময়নাগুড়িকে কেন্দ্র করেই পাহাড় ও সমতলের ব্যবসা হত। ফলে এই মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল অসীম।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা হওয়ার আগে,এখানে হাতি বিক্রি হত। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য নিকটবর্তী রাজ্যের লোকেরা এখানে মেলায় আসে।
তথ্যসূত্র-উইকিপিডিয়া