দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন মহা শিবরাত্রি। এদিন ভক্তি মনে পুজো করলে বাবা ভোলেনাথের ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূরণ হয়।
মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালন করা হয়। 'শিবরাত্রি' কথাটা দুটি শব্দ থেকে এসেছে। 'শিব' ও 'রাত্রি', যার অর্থ শিবের জন্য রাত্রী।
তবে শুনলে অবাক হবেন, শিব ও পার্বতীর বিয়েতে শুধু দেব-দেবীরা থাকেন না। এই বিশেষ মুহূর্তে রাক্ষস, ভুত-প্রেতরাও থাকেন। শিবরাত্রির দিন শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালা হয়। সেই জলে থাকে গঙ্গা জল, দুধ, ঘি, মধু এবং চিনির মিশ্রণ। পুরাণে বলা আছে, কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাদেব বসুন্ধরার ভাল করেন।
শিবরাত্রির সঙ্গে প্রচলিত আছে নানা কথা। পুরাণ মতে দেবী পার্বতীর সঙ্গে এদিন দেবাদিদেব মহাদেবের মিলন হয়। । আবার শোনা যায় এদিন থেকেই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন।
শিবরাত্রির দিনক্ষণ
এই বছর ১ মার্চ, মঙ্গলবার পড়েছে মহাশিবরাত্রির তিথি। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ২.২৩ মিনিট থেকে ১ মার্চ রাত ১২.৩৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে শিব চতুর্দশীর তিথি।
মহাশিবরাত্রি ২০২১- এর পুজোর সময়
নিশীথ কাল পুজোর সময়: ২ মার্চ রাত ১২.০৮ মিনিট থেকে রাত ১২.৫৮ মিনিট পর্যন্ত। অর্থাৎ ৫০ মিনিট স্থায়ী হবে এবারের নিশীথ কাল।
* প্রথম প্রহরের প্রহরের পুজোর সময়: সন্ধ্যা ৬:২১ থেকে ৯: ২৭ (১ মার্চ) মিনিট পর্যন্ত।
* দ্বিতীয় প্রহরের পুজোর সময়: ১ মার্চ রাত ৯:২৭ থেকে ২ মার্চ রাত ১২:৩৩ মিনিট পর্যন্ত।
* তৃতীয় প্রহরের পুজোর সময়: রাত ১২:৩৩ থেকে ভোর ৩:৩৯ (২ মার্চ) মিনিট পর্যন্ত।
* চতুর্থ প্রহরের পুজোর সময়: ভোর ৩:৩৯ থেকে সকাল ৬:৪৫ (২ মার্চ) মিনিট পর্যন্ত।
শিবরাত্রির ব্রত পালন করার আগের দিন সংযম করতে হয়। এদিন সিদ্ধ চালের ভাত বা আমিষ খেতে নেই। আতপ চালের সিদ্ধ ভাত খাওয়ার নিয়ম এদিন। এছাড়া কেউ চাইলে ময়দার তৈরি খাবারও খেতে পারেন। তবে সন্দক লবণ দিয়েই রান্না করতে হয়। এদিন সাধারণ লবণ একদমই খেতে নেই। শিবরাত্রির দিন মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে শক্তি বাড়ে।
এদিন চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করাতে হয়। বেলপাতা,ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা, কলকে প্রভৃতি ফুল শিবের প্রিয় বলে জানা যায়।
যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ, তীর্থের মধ্যে যেমন গঙ্গা তেমনই পুরাণ অনুযায়ী ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল শিব চতুর্দশীর ব্রত। তাই শিবরাত্রির ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ- এই চতুর্বিধ ফল লাভ হয়।
মহাশিবরাত্রিতে মূলত স্বামীর মঙ্গল কামনায় উপবাস করে থাকেন মহিলারা। তবে শুধু বিবাহিত মহিলা নয়, অবিবাহিত মহিলা এবং অনেক পুরুষও এই ব্রত পালন করেন নিষ্ঠা করে। প্রচলিত কথা অনুয়ায়ী বলা হয়, অবিবাহিত মেয়েরা এই ব্রত পালন করেন, যাতে তাঁরা শিবের মতো বর পান, যাকে তাঁরা আদর্শ পুরুষ হিসাবে মনে করেন।