
হিন্দুধর্মে পুজো এবং আচার-অনুষ্ঠানের গভীর তাৎপর্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি হল আরতি করা। যখনই কোনও দেবতার পুজো করা হয়, তখন প্রদীপ বা কর্পূর জ্বালিয়ে আরতি করার রীতি আছে। এর পরে, মন্ত্র জপ করার সময় জ্বলন্ত প্রদীপটি দেবতার সামনে ঘোরানো হয়।
তবে, এই আচারের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল আরতি সর্বদা ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘোরে সেদিকে করা হয়। এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীর ধর্মীয় নীতি যা শতাব্দী ধরে অনুসরণ করা হয়ে আসছে। এই আচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু কারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
আরতি মহাবিশ্বের গতিবিধির সঙ্গে সম্পর্কিত
ঘড়ির কাঁটার দিকে আরতি করা কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ। এই দিকটি মহাবিশ্বের স্বাভাবিক গতির প্রতীক। যখন প্রদীপটি ঘোরানো হয়, তখন তা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তির প্রতীক। এই ঘড়ির কাঁটার গতি সূর্যকে আকাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যে দিকে ঘোরানো হচ্ছে তার সঙ্গে মিলে যায়। অতএব, আরতির থালাটি সেই দিকে ঘোরানো হয়।
আরতি ভক্তির প্রতীক
ঘড়ির কাঁটার দিকে আরতি ঘোরালে তখন প্রতিটি আবর্তন ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির প্রতীক। আরতির সময় হাত নীচের দিকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের মন, শরীর, হৃদয় এবং আত্মা ঈশ্বরের কাছে নিবেদিত হয়। আরতির যতবার ঘোরানো হয় ততবার মন থেকে অহংকার, উদ্বেগ এবং নেতিবাচক শক্তি দূর করে।
প্রদক্ষিণার সঙ্গে আরতির কী সম্পর্ক
শাস্ত্র অনুসারে, মন্দির বা দেবতাকে প্রদক্ষিণ করার ঐতিহ্যকে প্রদক্ষিণা বা পরিক্রমা বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়, আরতির সময় প্রদীপ ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরানোও এক ধরনের প্রদক্ষিণ। এই আচারটি ইঙ্গিত দেয় যে ভক্তের হৃদয়ে ঈশ্বরের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। মনে রাখবেন যে আরতি করার সময়, ভগবানকে সর্বদা ডান দিকে স্থাপন করা উচিত যাতে আরতি ঘড়ির কাঁটার দিকে করা যায়। এটাও বিশ্বাস করা হয়, আরতির থালায় প্রজ্জ্বলিত শিখা কেবল আলোই দেয় না বরং জীবন থেকে অন্ধকার এবং নেতিবাচক শক্তিও দূর করে। তাই, শাস্ত্রে প্রতিদিন আরতি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।