বাঙালির ১২ মাসে তের পার্বণ। আর তারই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব অক্ষয় তৃতীয়া (Akshay Tritiya)। তবে শুধু বাঙালি নয়, গোটা দেশের হিন্দুদের জন্যেই এই উৎসব অত্যন্ত শুভ। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে, অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো হয়। যে কোনও কাজ সম্পন্ন করার জন্য এদিন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
সংস্কৃত অনুসারে 'অক্ষয়' শব্দের অর্থ হল 'যার কোনও ক্ষয়' নেই অর্থাৎ যা কখনোও শেষ হয় না। তাই মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় করা যে কোনও কাজ অক্ষয় থাকে। সেই সঙ্গে শাস্ত্র মতে, অক্ষয় তৃতীয়া সুখ প্রদানকারী এবং পাপ নাশকারী তিথি।
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৩-র দিনক্ষণ (Akshay Tritiya 2023 Date)
* আগামী ২৩ এপ্রিল (বাংলায় ৯ বৈশাখ) অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ তিথি পড়েছে।
* ২২ এপ্রিল ঘ ৮/১৫/১১ থেকে ২৩ এপ্রিল ঘ ৮/১৭/৫৯ পর্যন্ত তৃতীয়া থাকবে।
সোনা কেনার জন্য শুভ সময় ((Akshay Tritiya 2023 Gold Buying Lucky Time)
২২ এপ্রিল সকাল ০৭.৪৯ থেকে বিকাল ০৫.৪৮ পর্যন্ত থাকবে সোনা কেনার শুভ সময়
আরও পড়ুন: নীলষষ্ঠী- নববর্ষের আগেই, এভাবে কাঁসা- পিতলের বাসন- মূর্তি করুন চাঁদের মতো উজ্জ্বল
অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য (Importance Of Akshay Tritiya 2023)
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকটি পুরাণের কথা। চলতি পৌরণিক কথা অনুসারে, বিষ্ণুর নবম অবতার কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেন মর্ত্যে । তার সুদামা নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বন্ধু ছিলেন। সুদামা একদিনব ভুলবশত কৃষ্ণের সব খাবার খেয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি শ্রীকৃষ্ণকে খাবার দিতে একমুঠো চাল নিয়ে তাঁর ঘরে আসেন। তাঁকে খাওয়ানোর জন্য বন্ধু সুদামার এই আচরণ মুগ্ধ করেছিল শ্রীকৃষ্ণকে। এরপর শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে সুদামার সমস্ত দারিদ্র্য ঘুচে যায়। মনে করা হয় যেদিন এই ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। তাই দিনটি বিশেষ শুভ।
আরও পড়ুন: ৪০ পেরলেও কীভাবে ধরে রাখবেন যৌবন? রইল অ্যান্টি- এজিং স্কিনকেয়ার টিপস
শোনা যায় মহাভারতে কৌরবদের কাছে পাশা খেলায় হেরে বারো বছরের জন্য বনবাস ও এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন পাণ্ডবরা। তাদের বনবাসে থাকার সময়ে ফের কৌরবদের চক্রান্তে মুনি দুর্বাসা তার শিষ্যদের নিয়ে এক রাতে পাণ্ডবদের আশ্রয় গ্রহণ করতে যান। কিন্তু সেই সময় তাদের ঘরে কোনও অন্ন ছিল না। ক্ষুধার্ত মুনি দুর্বাসা অভিশাপ দেবেন ভেবে ভয় পান পাণ্ডব ও দ্রৌপদী। ঠিক সেই সময়ে শ্রীকৃষ্ণ এসে হাঁড়ির তলায় লেগে থাকা একটিমাত্র চালের দানা খেয়ে নেন। আর অবাক করা বিষয়, তাতেই পেট ভরে যায় দুর্বাসা ও তার শিষ্যদের। দুর্বাসার অভিশাপ থেকে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই পাণ্ডবদের রক্ষা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই এই দিন্টিকে শুভ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও শোনা যায়,অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই পরশুরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেজন্যেও এই দিনটি শুভ।
আরও পড়ুন: সন্তানের মঙ্গল কামনায় উপোস করেন মায়েরা, জানুন নীলষষ্ঠীর ব্রতের নিয়ম, পুজোর উপকরণ
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী- গণেশ পুজোর আয়োজন করেন। অনেকে দোকানে এদিন হালখাতাও হয়। শুধু দোকান নয়, অনেকে বাড়িতেও পুজো করেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তেরা ভিড় জমান। বিশ্বাস করা হয় যে, এদিন সোনা কিনলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ঘটে।