ভারতীয়রা উৎসবে গা ভাসাতে ভালোবাসেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে গোটা দেশজুড়েই চলতে থাকে নানা পার্বণ। খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান সব মিলিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে। সেরকমই একটা অনুষ্ঠান হল নববর্ষ (Noboborsho)। এই উৎসবে শুধু বাঙালি না, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষেরা উদযাপন করেন।
কথায় বলে 'মর্নিং শোজ দ্য ডে'। তাই বছরের প্রথম দিনটা বিশেষ ভাবে উদযাপন করেন সকলে। যে অঞ্চলগুলি সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, বৈশাখ (Baisakh) মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে বিবেচনা করে, তাদের নতুন বছরটি এই মাসের প্রথম দিনেই উদযাপিত হয়। যদিও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে ও আলাদা রীতিতে নববর্ষ উদযাপিত করে।
উত্তর ও মধ্য ভারতে নতুন বছর বৈশাখী, আসামে রঙ্গালি বিহু, তামিলনাড়ুতে তামিল পুঠান্ডু, কেরালায় বিশু, ওড়িশায় বিশুব সংক্রান্তি এবং পশ্চিমবাংলায় পয়লা বৈশাখ নামে পরিচিত নববর্ষ উৎসব। বাঙালি ব্যবসায়ীরা নতুন আর্থিক বছরের সূচনা করেন এদিন লক্ষ্মী-গণেশ পুজো ও হালখাতার মাধ্যমে। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, মিষ্টিমুখ, নতুন জামাকাপড় পরা এই সবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় বাঙালিরা।
নববর্ষের ১৪৩০-এর তারিখ (Noboborsho 1430 Date)
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, বাংলা নববর্ষ সাধারণত ১৪ বা ১৫ এপ্রিল পড়ে। বাংলা সৌর ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ এবং পাহেলা বৈশাখের মতো বিভিন্ন নামে ভারতের অংশ ডাকা হয়। এই বছর ১৪৩০-এ পা দেব আমরা। এবার ইংরাজি ১৫ এপ্রিল, শনিবার পড়েছে ১ বৈশাখ। সুতরাং চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হবে তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার।
নবান্ন উৎসব (Nabanna Utsav)
বিভিন্ন রাজ্যে নবান্ন উৎসব পালন করেন সকলে বিভিন্ন ভাবে। এই সময়ই নতুন ফসল ওঠে। সারা বছর যাতে ভাল করে চাষাবাদ করা হয়, তাই সেই প্রার্থনা করে বিশেষ পুজো করেন সকলে।
পয়লা বৈশাখ/ নববর্ষ (Poila Baisakh/ Noboborsho Festival)
পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি ব্যবসায়ীরা নতুন আর্থিক বছরের সূচনা করেন এদিন লক্ষ্মী-গণেশ পুজো ও হালখাতার মাধ্যমে। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, মিষ্টিমুখ, নতুন জামাকাপড় পরা এই সবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেন বাঙালিরা। বিশ্বব্যাপী বাঙালিরা নববর্ষের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান। কোলাকুলি, পরস্পরকে আলিঙ্গন করার প্রথা বাংলা ভাষীদের যুগ যুগ ধরে। যদিও গত বছর থেকে অতিমারীর জন্য সমস্ত সারতে হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই।
বোহাগ/ রঙ্গালি বিহু (Bohag/ Rongali Bihu Festival)
বোহাগ বিহু আসাম, মণিপুর এবং বাংলার বিভিন্ন অংশে এই সময়ে উদযাপন করা হয়। অসমীয়ারা বছরে তিনবার বিহু উদযাপন করেন। এই বিহুর দিন মাংস, চিড়া ও পিঠা জাতীয় খাবার তৈরি করা হয় বাড়িতে-বাড়িতে। একে অপরকে উপহার বিনিময়ও করেন তাঁরা। প্রবীণদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেন সকলে এদিন। এছাড়াও নতুন জামাকাপড় পরে ঐতিহ্যবাহী বিহু নাচে মেতে ওঠেন অসমীয়ারা।
পুঠান্ডু (Puthandu Festival)
নববর্ষের সময়ে তামিলনাড়ুতে পুঠান্ডু উৎসব পালন করা হয়। বাড়ি- ঘর পরিষ্কার করে, ফল, ফুল,রঙ্গোলী ও আলো দিয়ে সাজানো হয় এদিন। এছাড়াও সকলের বাড়িতে পুজোর আয়োজন করা হয়। অনেকে স্থানীয় মন্দিরগুলিতে পরিদর্শন করেন বছরের প্রথম দিন। নতুন জামাকাপড় পরে একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে পালন করেন এই বিশেষ দিন।
বৈশাখী (Vaisakhi Festival)
বছরের এই সময়ে উত্তর ও মধ্য ভারতে বৈশাখী উদযাপন করা হয়। ১৬৯৯ সালে এদিন, দশম শিখ ধর্মগুরু, গুরু গোবিন্দ সিং শিখ ধর্ম অনুসরণ করার কথা বলেছিলেন এবং খালসা সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল। পঞ্জাব ও হরিয়ানার উত্তর দিক এবং দিল্লির কিছু অংশে এই দিনটি খুব ধুমধামের করে পালন করা হয়। সকলে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান করেন। এছাড়াও ফসল ফলনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দিন হিসাবে এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে শিখ সম্প্রদায় বৈশাখী পালন করেন।
বিশু (Bishu Festival)
কেরল ও কর্ণাটকের কিছু অংশে বছরের এই সময়ে বিশু উৎসব পালিত হয়। আতশবাজি, আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠে সব বাড়ি। স্থানীয়ভাবে বিশ্বুপদাক্কম নামে পরিচিত এই উৎসব। নতুন জামা-কাপড় পরে, রকমারি খাওয়া-দাওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে পালন হয় এই শুভ দিন। ভগবান বিষ্ণুর সামনে ফল, চাল, শাক সবজি , পান ইত্যাদি রেখে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় এদিন।