বাঙালিদের বারো মাসে তের পার্বণ (Festivals)। আর এরকমই এক পার্বণ, হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) আর কয়েক দিন পরেই। মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে হয় বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) বা সরস্বতী পুজো। শিক্ষার্থীদের (Students) জন্য এই পুজো খুবই স্পেশাল। সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন এই বিশেষ দিনটার জন্যে।
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যে নামটা খুবই পরিচিত তা হল কুল (Jujube Fruit)। ছোট্ট এই ফল এই পুজোয় বিশেষভাবে দেবীকে (Goddess Saraswati) উৎসর্গ করা হয়। পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মূলত বাজারে কুল পাওয়া যায়। তবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে একটা প্রথা। লোকমুখে শোনা যায় সরস্বতী পূজার আগে কুল খেলে নাকি সরস্বতী ঠাকুর রেগে যান এবং পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। তবে জানেন, এর পিছনে রয়েছে কী কারণ?
ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। পরীক্ষায় পাশ করা কিংবা ভালো নম্বর পাওয়া তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তবে এর কারণ অনেকেরই অজানা।
আরও পড়ুন: দেবী সরস্বতীর বাহন কেন রাজহংস? জানুন আসল কারণ
টক-মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট এই ফল কুল প্রায় সবারই খুব প্রিয়। কুলের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা সকলেরই জানা। শুধু ঘরে ঘরে নয় স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠা করে হয় বাগদেবীর আরাধনা। সকাল থেকে উপোস করে অঞ্জলি দিয়ে তার পরেই প্রসাদে কুল খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে। এমনকী দোয়াতের উপরও একটা নারকেল কুল রাখার নিয়ম রয়েছে।
আরও পড়ুন: কবে পড়েছে এবছরের সরস্বতী পুজো? জানুন দিনক্ষণ, শুভ তিথি ও মন্ত্র
* শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে ব্যাসদেব দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। শোনা যায়, সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে। তারপরেই দেবী, তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হবেন।
সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন এবং যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিয়ে, গৃহপ্রবেশ থেকে সরস্বতী পুজো! জানুন, মাঘ মাসের সবচেয়ে শুভ দিনক্ষণ, মুহূর্ত
* সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত রীতি। তার মধ্যে কৃষি প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দু ধর্মে কোনও মরসুমের প্রথম ফলই দেবতাদের উৎসর্গ করে খাওয়ার রীতি রয়েছে। পৌষ-মাঘ এই সময়টাতে বাজারে খুব সহজে এবং ভাল বিভিন্ন রকমের কুল মেলে। আর সেই সময়ই পঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। তাই বসন্ত পঞ্চমীতেই উৎসর্গ করে তা প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার রীতি।
আরও পড়ুন: সামনেই মৌনী অমাবস্যা! জানুন দিনক্ষণ, তিথি ও পুণ্যলাভের নিয়ম
* প্রচলিত এই লোকাচারের পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। বসন্তকালে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা এই সময়ে ঘরে ঘরে লেগে থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল বসন্তকালে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এই ফল মারাত্মক টক হয় যা দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক। তাই এটি খাওয়ার নিয়ম নেই সেই সময়ে।
* এছাড়াও শাস্ত্রে বলা রয়েছে, "বার্তাকু কার্তিককে বর্জ্যং মূলং বা বদরং মাঘে। চৈত্রে শিম্বী পুনস্তুম্বী ভাদ্রে বর্জ্যং দ্বিজাতিভিঃ।" যার অর্থ, দ্বিজাতিগণ কার্তিক মাসে বেগুন, মাঘ মাসে মুলো বা কুল, চৈত্রে শিম এবং ভাদ্র মাসে গোলাকার লাউ খাবেন না।
আরও পড়ুন: এই রাশির জাতকরা একে অপরের জন্য একেবারে বেমানান! দাম্পত্যে অশান্তি লেগেই থাকে...
যে কোনও লোকাচার বা শাস্ত্রের নিয়ম ছোটরা বোঝে না বা মানে না। তাই বাড়ির বড়রা তাদের ভয় দেখান এই বলে যে, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। তাই সকলে অধীর ভাবে অপেক্ষা করে সরস্বতী পুজোর, যাতে নারকেল, টোপা ইত্যাদি ভিন্ন রকমারী কুলের স্বাদ তারা নিতে পারে।