রাজ্য সরকারি কর্মীরা যখন অধীর আগ্রহে বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার ঘোষণার অপেক্ষায় নবান্নের দিকে চেয়ে আছেন, তখনই পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট পেশ করল অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি বেতন কমিশন মেনেই রাজ্যকেও একই হারে DA দিতে হবে, এমন প্রয়োজন নেই।
চটে লাল কর্মচারী সংগঠনগুলি
অভিরূপ সরকারদের এই রিপোর্টে চটে লাল কর্মচারী সংগঠনগুলি। কনফেডারেশনের মলয় মুখোপাধ্যায় সরাসরি বলে দিয়েছেন, 'অভিরূপ সরকার নিজে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেয়েছেন, এখন বলছেন রাজ্য সরকার চাইলে দেবে, না চাইলে নয়? এ কেমন বৈজ্ঞানিক যুক্তি? উনি তো স্ট্যাটিসটিকস-এর লোক, উনিই বলছেন কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স মেনে চলার দরকার নেই!'
ডিএ নিয়ে রাগ নতুন নয়, এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে
ডিএ নিয়ে রাজ্যে অসন্তোষ তো অনেক দিনের। ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যে ডিএ বকেয়া, সেটা কিন্তু পঞ্চম পে কমিশনের অধীনে। সেই নিয়েই হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বকেয়া মেটানোর। এখন যেটা সামনে এল, সেটা ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্ট। ২০১৫ সালেই আসলে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল কেন্দ্রের পে কমিশন মানতে হবে না। কিন্তু ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ১ জুলাইয়ের মধ্যে রিপোর্ট জনসমক্ষে আনতেই হবে। এবার সেইমতোই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল।
এতে বলা হয়েছে, কর্মীরা কোন গ্রেডে কত টাকা পাবেন, সে হিসেব দেওয়া আছে। সঙ্গে এই বিতর্কিত বক্তব্য, রাজ্য চাইলে ডিএ দেবে, কেন্দ্রীয় নিয়মের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে না।
‘অর্থনীতিবিদ হয়ে কী করে বলেন এসব?’ কনফেডারেশনের প্রশ্ন
রাজ্যের কর্মচারীদের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেন, এই সুপারিশ একেবারেই একপেশে। 'তিন বছর ধরে মোটা টাকায় কমিশনের চেয়ারম্যানের চেয়ার দখল করে বসে থেকে এখন রাজ্যকে বাঁচাতে এই ধরনের কথা বলছেন অভিরূপ সরকার, বলছেন মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, 'সব পে কমিশনেই তো বলা আছে, কেন্দ্র-রাজ্য দুই জায়গাতেই অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স ধরেই ডিএ নির্ধারণ হয়। এখানে হঠাৎ অন্য কথা বলা হল কেন?' সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই বক্তব্য আসলে বকেয়া ডিএ না দেওয়ারই একরকম 'সংবিধানসম্মত অজুহাত' তৈরি করে দেওয়া।