নিয়োগ থেকে পদোন্নতি- ২০ বছর ধরে হিমালয়ের জনৈক যোগীর পরামর্শেই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (NSE) প্রাক্তন এমডি-সিইও চিত্রা রামকৃষ্ণ (Chitra Ramkrishna)! অবিশ্বাস্য মাইনে দিয়ে আনন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে এনএসই-র গ্রুপ অপারেটিং অফিসার এবং এমডি-র উপদেষ্টার পদে। সেটাও ওই যোগীর পরামর্শেই। এমনকি আনন্দ এনএসই-তে 'নম্বর টু' হয়ে গিয়েছিলেন। চিত্রার বিরুদ্ধে অনিয়মের মামলায় ১৯০ পাতার রায়ে এসব তথ্যই উল্লেখ করেছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI)।
এনএসই-তে যোগ দেওয়া আগে বালমের লরি ও আইসিআইসিআই গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে কাজ করতেন আনন্দ সুব্রহ্মণ্যম। বার্ষিক ১৪ লক্ষের সামান্য বেশি পেতেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে নিযুক্ত হন এনএসই-তে। এমডি এবং সিইও-র মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে তিনি চাকরি পান। বার্ষিক বেতন ১.৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের মাইনে থেকে ১০০০ শতাংশ বৃদ্ধি। নিজের পাশের কেবিন সুব্রহ্মণ্যমকে দিয়েছিলেন চিত্রা। সুব্রহ্মণ্যম 'বসে'র কাছের লোক বলে অচিরেই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
মূলধনী বাজার বা ম্যানেজার স্তরে কাজের কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না সুব্রহ্মণ্যমের। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ফের বেতন বাড়ে তাঁর। মাইনে বেড়ে হয় ২.০১ কোটি। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ৩.৩৩ কোটি। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালের এপ্রিলে গ্রুপ অপারেটিং অফিসার হিসেবে পদোন্নতি হয় আনন্দের। বেতন বেড়ে হয় ৪.২১ কোটি। ২০১৬ সালে এনএসই-র অডিট কমিটি তদন্ত করে জানায়, সুব্রহ্মণ্যমকে নিয়ম ভেঙে নিয়োগ করা হয়েছে। অক্টোবরের বৈঠকে সর্বসম্মতিতে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর পদত্যাগ ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। ইস্তফা দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যান আনন্দ সুব্রহ্মণ্যম।
২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চিত্রা এনএসই-র এমডি-সিইও ছিলেন। তাঁর জমানায় বহু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তদন্ত শুরু করে সেবি। সেই তদন্তের রায়ে বলা হয়েছে, গত ২০ বছর ধরেই ব্যক্তিগত এবং পেশাদারি বিষয়ে হিমালয়ের এক সাধুর পরামর্শ মেনে চলেন চিত্রা। তাঁকে 'শিরোমণি' নামে ডাকেন। চিত্রার 'বিশ্বাস', হিমালয়ে থাকেন ওই সাধু। তাঁর কোনও আশ্রয়স্থান নেই। ডাকলে হাজির হন। স্টক এক্সচেঞ্জের গোপন তথ্য, আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়েও ওই যোগীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন চিত্রা। এমনকি কে কেমন কাজ করেছেন, তা-ও ওই যোগীর কথাইতেই ঠিক করেছেন।