সাহারায় সঞ্চয় করে অনেক টাকা খুঁইয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে পারেন তাঁরা। এমন সম্ভাবনাই তৈরি হয়েছে। কীভাবে? সাহারার সম্পত্তি বেচে যে টাকা উঠে আসবে সেটাই ফেরত দেওয়া হবে বিনিয়োগকারীদের। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিনিয়োগকারী টাকা রেখেছিলেন সাহারা ইন্ডিয়ার নানা স্কিমে। এ রাজ্যের বহু সঞ্চয়কারীও রয়েছেন এই তালিকায়।
সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আর্জি জানিয়েছে সাহারা ইন্ডিয়া কমার্শিয়াল কর্পোরেশন লিমিটেড (Sahara India Commercial Corporation Ltd)। তাতে বলা হয়েছে, সংস্থার মালিকাধীন
কয়েকটি রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি আদানি প্রোপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেডের (Adani Properties Pvt. Ltd) কাছে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হোক। এই চুক্তির অংশ হিসাবে সাহারা ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর ৮৮টিরও বেশি সম্পত্তি বিক্রি করার প্রস্তুতি চলছে। যার অর্থ, সম্পত্তি বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, সাহারা ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিতে মোট বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ১.৩ কোটি। ১.১২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আটকে রয়েছে।
২০১২ সাল থেকে চলছে সাহারা ইন্ডিয়ার মামলা। সাহারা গোষ্ঠীর দুটি সংস্থাকে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেবি সাহারা এসক্রো অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৬.২৫ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। গত ২ বছরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সাহারার বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৫,০৫৩ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সাহারা গোষ্ঠীর সমবায় সমিতিতে টাকা রাখা বিনিয়োগকারীরা ফেরত পেয়েছেন।
ফেরতের জন্য কোথায় আবেদন করবেন?
ইতিমধ্যেই সাহারা রিফান্ড পোর্টাল (https://mocrefund.crcs.gov.in) চালু করেছেন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ। এই পোর্টালে আবেদন করলে অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টকে সরকার জানিয়েছে যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৬ লক্ষ বিনিয়োগকারীকে ৫,০৫৩ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আরও ১৩ লক্ষের বেশি বিনিয়োগকারীর আবেদন জমা পড়েছে। যার আর্থিকমূল্য ২৭,৮৪৯ কোটি। মনে করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও প্রায় ৩২ লক্ষ বিনিয়োগকারী আবেদন করতে পারেন। ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পারে তা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
সাহারার সম্পত্তি কোথায় কত সম্পত্তি?
সাহারা গোষ্ঠীর বৃহত্তম সম্পত্তি, মহারাষ্ট্রের পুণেতে আম্বি ভ্যালি সিটি। এই শহরটি প্রায় ৮,৮১০ একর জায়গা জুড়ে। সাহারার মালিকানাধীন হোটেল সাহারা স্টার, লখনউতে সাহারা সিটি এবং সাহারা গঞ্জ মল। এছাড়াও মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং উত্তরাখণ্ডসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে অসংখ্য সম্পত্তি রয়েছে সংস্থার। তবে বিক্রি হওয়া সমস্ত সম্পত্তির মূল্য প্রকাশ করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ১৪ অক্টোবর।
আদালত সম্পত্তি চুক্তি অনুমোদন করলে সাহারা গোষ্ঠীর সমস্ত সম্পত্তি বিক্রির পথ প্রশস্ত হবে। রিয়েল এস্টেট, হোটেল, টিভি চ্যানেল, বিমা এবং খুচরো পণ্য বিক্রির ব্যবসা করত সাহারা গোষ্ঠী।
উত্তর ভারত (উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং রাজস্থান) জুড়ে বহু জমি অধিগ্রহণ করেছিল সাহারা গোষ্ঠী। বেশ কয়েকটি জমি বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)সহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা। নিউ ইয়র্কের দ্য প্লাজা হোটেলের একটি বড় অংশও অধিগ্রহণ করেছিল সংস্থা। এই সম্পত্তিটি পরে ২০১৮ সালে কাতারের একটি আর্থিক সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। সাহারা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রায় ১৯টি সম্পত্তির লিজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ কয়েকটির মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। দখল হয়েছে বেশ কয়েকটি জমি। ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কিছু জমি। খালি লখনউয়ে সাহারার জমির বাজার মূল্য আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা।