চা শিল্প খাদের কিনারে
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে "দুটি কুঁড়ি একটি পাতার" চা শিল্প একেবারে খাদের কিনারে। দার্জিলিং থেকে কুমারগ্রাম সর্বত্র একটাই চিত্র। পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের চা বলয়ে এই সময় ভরা পাতার মরশুম। প্রতিটি চা বাগানেই নতুন পাতার রেন ফ্লাশ শুরু হবার মুখে। ইতিমধ্যেই সেকেন্ড ফ্লাশে যতটা লাভ ঘরে তুলতে পারবেন ততটা হয়নি।বিরাট পরিমান আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে চা শিল্প।
৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে পাতা তোলা অসম্ভব
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সমস্ত বাগানেই মাত্র ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে বাগানে নতুন পাতা তোলার নির্দেশ লাগু রয়েছে। কচিপাতার এই ভরা মরশুমে মাত্র ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে বাগানের সমস্ত নতুন পাতা তোলা অসম্ভব বলেই মনে করছে সমস্ত চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
চার লক্ষ মানুষের রুজি মার খেতে পারে
তরাই, ডুয়ার্সে রয়েছে ৩০২ টি চা বাগান। দার্জিলিং পাহাড়ে রয়েছে ৭৮ টি বাগান। পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের চা শিল্পের সাথে জড়িত চার লাখ মানুষ। আর্থিক ক্ষতির জেরে শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাগানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিরাট অংকের লোকসানের দুশ্চিন্তায় রয়েছে গোটা চা বলয়।
রেন ফ্লাশ-এর উৎকৃষ্ট সময়
বছরের এই সময়েই বাগানে চা পাতার উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়ে যায়।বাগানের বার্ষিক লাভ,লোকসানের হিসেব নির্ভর করে এই সময়ের পাতা উৎপাদনের উপর। এমতাবস্থায় কীভাবে এত কম শ্রমিক নিয়ে চা বাগানে রেন ফ্লাশে মরশুমে কাজ হবে এই নিয়ে রীতিমতো কপালে চিন্তার ভাঁজ চা বাগান কর্তৃপক্ষের।
জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই চা বাগানে শুরু হয়ে যায় রেন ফ্লাশ। জুন থেকে অক্টোবর টানা পাঁচ মাস ধরে চলে বাগানের রেইন ফ্লাশ। এই রেন ফ্লাশের চায়ের মান গুনগত দিক থেকে উৎকৃষ্ট।
বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি
মাঝেরডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর জানান, বর্তমানে চা বাগানে ৫০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চা বাগান গুলোতে রেন ফ্লাশের পাতা তোলার কাজ শুরু হয়ে যাবে। বছরের অন্যান্য মরশুমের থেকে এই সময় বাগানগুলোতে চা পাতার উৎপাদন হবে দ্বিগুণ। পাতার মান খুব উৎকৃষ্ট।
এই সময় দ্রুত বাগান থেকে পাতা তোলার কাজে কয়েক হাজার অস্থায়ী শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়।
বাগানের ম্যানেজাররা জানান, যদি জুন মাসেও ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে বাগানে কাজ করতে হয় তাহলে চায়ের উৎপাদন ও চায়ের গুণগত মান দুটোই ক্ষতির মুখে পড়বে। কেন না এত কম শ্রমিক দিয়ে কোনো প্রকার গুণগত মানের চা উৎপাদন করা সম্ভবপর হবে না। অন্যদিকে বাগানের উৎপাদন ও কমে যাবে। কেননা এই সময় চা বাগানে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
শ্রমিক নেতাদের দাবি
এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন বাগানে রেন ফ্লাশে প্রচুর চা পাতা উৎপাদন হয়। আর এত কম শ্রমিক দিয়ে বেশি পরিমাণ চা পাতা ওঠানো সম্ভব হবেনা। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে চা শিল্প।