৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তারপর থেকেই শোরগোল রাজ্যজুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। একাংশের মতে, এই চাকরি বাতিলের নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক দুর্নীতি। আবার অনেকের মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির কারণে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়।
ঠিক কী কারণে চাকরি গেল ৩৬ হাজার শিক্ষকের ?
১) এই চাকরি বাতিল নিয়ে মোট ১৭ পাতার আদেশনামা দিয়েছেন মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে রয়েছে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ- ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যে ইন্টারভিউ হয়েছিল তার সঙ্গে যেন স্থানীয় ক্লাব পরিচালনার মিল রয়েছে। অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না-হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে শিক্ষকতার চাকরি পেলেন চাকরিপ্রার্থীরা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বরাদ্দ নম্বরে শেষে ঠাঁই পাওয়া প্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ে কার্যত ১০-এ ১০ পেয়েছেন।
২) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও পর্যবেক্ষণ, ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয়েছে তাঁদের কাছে, যাঁদের টাকা আছে। বিচারপতি লেখেন, 'এমন পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি এর আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গে হয়নি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (পার্থ চট্টোপাধ্যায়), প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি (মানিক ভট্টাচার্য) এবং কয়েক জন দালালের মাধ্যমে পণ্যের মতো চাকরি বিক্রি হয়েছে। ওই দু’জন এখন জেলবন্দি। তদন্তকারী ইডি এবং সিবিআই এ ব্যাপারে আরও তথ্য সামনে আনছে।'
আরও পড়ুন : বাংলায় নিষিদ্ধ হলেও ১০০ কোটির ক্লাবে'The Kerala Story', পিছনে ফেলল সলমনকে
৩) মাননীয় বিচারপতি রায়ে এও জানান, 'এই পুরো অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি হয়েছে পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির জন্য। তিনি সব নিয়ম জানতেন। তিনি নিয়ম ভেঙেছেন। তাই রাজ্য সরকার যদি মনে করে, নতুন নিয়োগের পুরো ব্যয়ভার প্রাক্তন সভাপতির কাছ থেকে নিতে পারে।'
৪) বিচারপতি রায়ে আরও জানান, অ্যাপটিটিউড টেস্টের জন্য কোনও নির্দেশিকা ছিল না। প্রচুর সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরাই জানেন না অ্যাপটিটিউড টেস্ট কী। তাছাড়া টেস্টও নিয়ম মেনে হয়নি।
৫) পর্ষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়েছে। কিন্তু তথ্য প্রমাণ অন্য তথ্য সামনে এনেছে। প্রার্থী এবং পরীক্ষকরা জানিয়েছেন, কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্টই নেওয়া হয়নি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ
১) মাননীয় বিচারপতির নির্দেশ, ২০১৬ সালের প্যানেলে যে ৩৬ হাজার জন অপ্রশিক্ষিত ছিলেন, তাঁদের সকলের চাকরি বাতিল।
২) ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরাও এই নিয়োগে অংশ নিতে পারবেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে যাঁদের চাকরি গেল, তাঁরাও নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নতুন করে চাকরির আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে সকলকেই প্রশিক্ষিত হতে হবে।
৩) যাঁদের চাকরি বাতিল করা হল তাঁরা আগামী ৪ মাস ওই একই স্কুলে চাকরি করতে পারবেন। তবে তাঁরা প্য়ারা টিচারদের সমতুল্য বেতন পাবেন।
৪) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও নির্দেশ,৩৬ হাজার শিক্ষক ছাড়াও ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরাও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কারও বয়স পেরিয়ে গেলেও তাঁরাও অংশ নিতে পারবেন।
এদিকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার অনুমতি চাওয়া হয় পর্ষদের তরফে। তার অনুমতি দেওয়া হয়। আদালত সূত্রে খবর, মঙ্গলবারই এই চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি হতে পারে।