বীরভূম মানেই অনুব্রত মণ্ডলের গড়। তবে এই প্রথমবার তৃণমূলের অন্যতম 'বিশ্বস্ত সৈনিক'কে ছাড়াই ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিল বীরভূম। গরু পাচার মামলায় এখন দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত। কেষ্টহীন বীরভূমে এবার তৃণমূলের লড়াই কার্যত চ্যালেঞ্জের ছিল। বিশেষ করে, গত ৩ বারের সাংসদ শতাব্দীর কাছে বীরভূম আসন ধরে রাখা অগ্নিপরীক্ষার মতো ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে লোকসভা নির্বাচনের ট্রেন্ড বলছে, সেই পরীক্ষায় আবারও সফল ভাবে পাশ করলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ। এই নিয়ে bangla.aajtak.in-এ উচ্ছ্বসিত শতাব্দী। ভোট-পরীক্ষায় জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই বললেন, 'দারুণ, দারুণ।' কথা বললেন অনুব্রতকে নিয়েও।
কী বললেন শতাব্দী?
bangla.aajtak.in-এ ভোটের ফল নিয়ে প্রশ্ন করতেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল শতাব্দীর গলায়। বললেন, 'দারুণ দারুণ। আমরা ভেবেছিলাম, আগের থেকে বাড়বে (ভোটে জয়ের ব্যবধান। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে এগিয়ে শতাব্দী)। গত ৩ বার আগের থেকে বেড়েছিল। আশা করেছিলাম ১ লক্ষ পার করব।' এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জয় ঘোষণা হয়নি বীরভূমে। তবে যে ব্যবধানে এগিয়ে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী, তাতে তাঁর জয় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনুব্রত-হীন বীরভূমে কি শতাব্দীর লড়াই এবার খানিকটা 'কঠিন' ছিল? তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, 'যাঁরা বলতেন, তাঁরা এখন হয়তো নিশ্চয়ই অন্যরকম ভাববেন। লড়াইটা ছিল। পঞ্চায়েত থেকে বলেছিলাম জিতব। অনুব্রত মণ্ডল এলাকার অনেক সমস্যা সামলাতেন। এবার এসব আমায় সামলাতে হয়েছে। কর্মীদের প্রচুর পরিশ্রম, এত লড়াই করেছে। ওরা যদি লড়াই না করত, তা হলে হত না। ভালবাসার সঙ্গে পরিশ্রম করেছে। আবেগের সঙ্গে পরিশ্রম করেছে। ওদের সঙ্গে সম্পর্কটা নিবিড় হয়েছে। যেহেতু পঞ্চায়েত থেকে বার বার মিটিং করেছি। বার বার কথা বলেছি। একেকটা এলাকা ধরে ধরে মিটিং করেছি। ওদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছি। আদান-প্রদান হয়েছে। এটা এত বছর হয়নি। এতদিন ওরা ভোট করত, আমি সাংসদ হতাম। পঞ্চায়েত থেকে সব একাকার হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, গরু পাচার মামলায় ২০২২ সালের অগস্ট মাসে গ্রেফতার হন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। তার পর থেকেই জেলবন্দি এই দাপুটে নেতা। পরে এই মামলায় তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বর্তমানে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন অনুব্রত এবং সুকন্যা। বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতের ভূমিকা বরাবরই নজর কাড়ত। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বীরভূমের ভোটের অঙ্ক কষায় পটু ছিলেন অনুব্রত। তাই তাঁর উপরই আস্থা রেখে ভোটের বৈতরণী পার করেছে জোড়াফুল শিবির। তবে এই প্রথমবার অনুব্রতকে ছাড়াই বীরভূমে লড়ল বাংলার শাসকদল এবং সাফল্যও পেল। ২০০৯ সাল থেকে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন, শতাব্দীর জয়ের নেপথ্যে বরাবরই অনুব্রতের বড় অবদান রয়েছে। এই কথা অনেক সময়ই শুনতে হত শতাব্দীকে। তাই এ বছর লোকসভা নির্বাচন শতাব্দীর নিজের কাছেও 'বড় পরীক্ষা' ছিল বলে মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। সেই ভোট-পরীক্ষায় যে শতাব্দী সফল, তা প্রমাণিত হল বলেই মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবির।
অনুব্রতের গ্রেফতারের পর থেকেই তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রতের গ্রেফতারের পরও দলীয় পদ থেকে তাঁকে সরাননি দলনত্রী। ভোটের প্রচারে কেষ্টর প্রশংসাও করেছিলেন মমতা।
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, বীরভূমে লড়াইয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। প্রথমে বিজেপি প্রার্থী করেছিল প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরকে। শেষ মুহূর্তে তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল হয়ে যায়। পরে প্রার্থী করা হয় দেবতনু ভট্টাচার্যকে।
অন্য দিকে, বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে শতাব্দী বললেন, 'সন্দেশখালির ফল দেখে নিন। পৃথিবী বিখ্যাত করে দিয়েছিল। সমস্ত মানুষের প্রত্যাখান, তা প্রমাণিত হল। রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা বাংলার মানুষের উত্তর দিয়েছে। মমতার বিরুদ্ধে কারও কোনও কথা বলা উচিত নয়। মমতার সঙ্গে বাংলার মানুষ আবেগ যুক্ত। ছিন্ন করতে পারবে না।'