Advertisement

Nandigram Divas: ঐতিহাসিক ১৪ মার্চ, ফিরে দেখা সেই ইতিহাস যা বদলে দেয় বাংলার রাজ্যপাট

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে বাম জমানায় পূর্ব মেদিনীপুরের এক অখ্যা গ্রাম উঠে এসেছিল গোটা বিশ্বের নজরে। দিল্লি সীমানায় আজ কৃষক আন্দোলন নিয়ে উত্তাল হচ্ছে দেশ। আর ২০০৭ সালের নন্দীগ্রামের সামান্য এক কৃষক আন্দোলন ঘটিয়ে দিয়েছিল বাংলার সরকারের পরিবর্তন।

২০১১ সালে বাংলার পট পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর ছিল নন্দীগ্রাম
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 14 Mar 2021,
  • अपडेटेड 9:15 AM IST
  • ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ ঘুরিয়ে দিয়েছিল বাংলার রাজনীতির মোড়
  • ২০১১ সালে বাংলার পট পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর ছিল নন্দীগ্রাম
  • এবারের ভোটেও ১৪ বছর আগের নন্দীগ্রামের স্মৃতিকে উস্কে আনতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে

এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশের কথা ছিল গত ১১ মার্চ। কিন্তু দলনেত্রীর পায়ে চোট পাওয়া ভেস্তে দিয়েছিল সব পরিকল্পনা। শেষপর্যন্ত ঠিক হয়েছিল রবিবার ১৪ মার্চ আসন্ন বিধানসভা ভোটে সেই ইস্তেহার প্রকাশ করবে দলনেত্রী কালীঘাটের বাড়ি থেকেই। কারণ নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে ১৪ মার্চের স্মৃতি। আর এই নন্দীগ্রামকেই এবারর নির্বাচনে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলনেত্রী। যদিও শনিবার রাতে দলের তরফে জানান হয়েছে শেষপর্যন্ত প্রযুক্তিগত কারণে রবিবার ইস্তেহার প্রকাশ করা যাচ্ছে না। কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তৃতীয়বার বাংলার মসনদে আসতে সেই ১৪ বছর আগের নন্দীগ্রামের স্মৃতিকে উস্কে আনতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই সিঙ্গুরের মত নন্দীগ্রামও ২০১১ সালে বাংলার পট পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর ছিল।

প্রথম ভোটেই 'জায়ান্ট কিলার' হয়েছিলেন মমতা! এবার সুযোগ মীনাক্ষির সামনেও

India Today Conclave South 2021:জনমত সমীক্ষায় পাল্লা ভারী 'দিদি'র, কী বলছেন নাড্ডা

লাল রঙে লেখা সেই ইতিহাস
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে বাম জমানায়  পূর্ব মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম উঠে এসেছিল গোটা বিশ্বের নজরে। দিল্লি সীমানায় আজ কৃষক আন্দোলন নিয়ে উত্তাল হচ্ছে দেশ। আর ২০০৭ সালের নন্দীগ্রামের সামান্য এক কৃষক আন্দোলন ঘটিয়ে দিয়েছিল বাংলার সরকারের পরিবর্তন। ১৪ জন জলজ্যান্ত মানুষের মৃতদেহ আর অসংখ্য মহিলার ধর্ষিত শরীরের সাক্ষী ছিল সেদিনের নন্দীগ্রাম। ঘটনার সুত্রপাত অবশ্য হয়েছিল  ২ জানুয়ারি। সেদিন তৃণমূল সমর্থিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের সাথে সিপিএম বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ৬ জন। এরপর আন্দোলন তুলতে ১৪ মার্চ বিশাল পুলিশ বাহিনী নন্দীগ্রামের দিকে এগিয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা বাধা দিলে শুরু হয় নির্বিচারে গুলি চালানো। সেদিন পুলিশের সঙ্গে সিপিএমের লোকজনও আক্রমণ চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রাণ দিয়ে সেই আন্দোলন প্রতিহত করেছিল নন্দীগ্রামের মানুষ।

Advertisement

 

শহরের রাজপথে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আঁচ

তুলনা হয়েছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের সঙ্গে
নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী কঠিন প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন নন্দীগ্রামে পুলিশি  নৃশংসতার তুলনা টেনেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। সেই সময় বাম সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন সমাজের সমস্ত স্তরের বিদ্বজনেরা। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে থাকে সাধারণের মনে।  বাংলায়  রাজনৈতিক মসনদে পরিবর্তন হয়তো ঘটেছিল ২০১১ সালে। কিন্তু তার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল ১৪ মার্চেই।

 

মমতাকে রাজনীতির ময়দানে অক্সিজেন দিয়েছিল নন্দীগ্রাম

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সেই সঙ্গীই এখন মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের গুরুত্ব তৃণমূলনেত্রীও ভাল করে জানেন। ১৪ মার্চ  দিনটাকে নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে জোড়াফুল শিবির। স্বীকার করতেই হবে রাজ্যে পালা বদলের অন্যতম মাইলস্টোন নন্দীগ্রাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন  শুভেন্দু অধিকারী। আজ ১৪ বছর বাদে একদা তৃমমূল নেত্রীর বিশ্বস্ত সেনাপতি ভিন্ন শিবিরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সম্মুখ সমরেও হাজির সেই নন্দীগ্রাম। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকেই নন্দীগ্রামে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে আসছে তৃণমূল। লোকসভা থেকে বিধানসভা সব ভোটেই জয়জয়কার ঘাসফুল প্রার্থীদের। ২০১৬ নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকেই  তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক ও মন্ত্রী হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে এ বার কিন্তু  ঘাসফুলের লড়াই ততটা সহজ নয়। গত কয়েক মাসে একের পর এক নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রী-সাংসদ  বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়েছেন। চাপে থাকা তৃণমূলনেত্রী তাই ফের একবার নন্দীগ্রাম ফ্যাক্টরকে কাজে  লাগাতে ময়দানে নেমেছেন বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।  নন্দীগ্রাম থেকে মমতার প্রার্থী  তাই ভোটের আবহে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা বলে মনে করা হচ্ছে। 

 

শহরের রাজপথে সেই সময়ে বিদ্বজনেরাও প্রতিবাদে সামিল হন

শহিদ পরিবারেও ভাগাভাগি
গত ৫ বছরের নন্দীগ্রামে দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই তিনিই শুভেন্দু দল ছাড়তে গত জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামে গিয়ে সেখান থেকে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। অনেকেই এটাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করছেন। কিন্তু তৃণমূলের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের টিআরপি যে শহিদ পরিবার, শুভেন্দু বিজেপিতে যেতে তাঁদের মধ্যেও ভাগাভাগি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছিল শুভেন্দুর। সেই লড়াইয়ে দাদার পাশেই দাঁড়িয়েছেন নন্দীগ্রামের ‘শহিদ’ পরিবারের একাংশ। তৃণমূল যতই শুভেন্দুকে বিশ্বাসঘাতক বলে সুর চড়াক  শহিদ পরিবারগুলির একাংশের বক্তব্য তাঁদের  বিপদে আপদে সব সময় পাশে থাকেন দাদা। এই আবহে শহিদ এবং নিখোঁজদের পরিবারের একটা বড় অংশকে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক বিজেপির কর্মসূচিতেও। ভোটের মুখে তাই কার্যত দিদি-দাদাকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নন্দীগ্রাম। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। তারপরে কেটে গিয়েছে এক দশক। অথচ এ বারও বিধানসভা ভোটের মুখে সেই নন্দীগ্রামই রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

 


 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement