২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করল গেরুয়া শিবির। তৃণমূলনেত্রীর অন্যতম সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এরাজ্যের আরও একাধিক বিধায়ক ও বিরোধী নেতা অমিত শাহের হাত থেকে তুলে নিল গেরুয়া পতাকা। ২০২১ সালে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে এরাজ্যে পদ্ম শিবির যে কড়া টক্কর দেবে তার আভাস যেন মেদিনীপুর কলেজ মাঠ থেকেই মিলল। তবে আজ থেকে ঠিক আড়াই বছর আগে, সেই সময় রাজ্যে তখনও এত দাপট বাড়েনি গেরুয়া শিবিরের। লোকসভা ভোটে নিজেদের শক্তিও প্রমাণ করে উঠতে পারেনি পদ্ম শিবির। ধীরে ধীরে বাংলায় প্রভাব বৃদ্ধির ছক কষছেন মোদী-শাহ জুটি। আর এই সময়ই ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই মেদিনীপুর শহরে কৃষকদের কাছে থেকে সংবর্ধনা নিতে জনসভা করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরাজ্যে তখন ততটা সংগঠন মজবুত হয়নি গেরুয়া শিবিরের। মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সেবার লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চমকে দিতে গিয়েছিল রাজ্য বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রীর সেই হাইভোল্টেজ সভায় দুই মেদিনীপর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আরামবাগ সহ ১০টি লোকসভা এলাকা থেকে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এসেছিল গেরুয়া শিবির। সেভাবে সংগঠন গড়ে না ওঠা বাংলায় ভিড় থেকে আপ্লুত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু মোদীর ভাষণের সময়ই ঘটে যায় বিপত্তি, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সভাস্থলের প্যান্ডেলের একাংশ। তার নীচে চাপা পড়ে গুরুতর জখম হন ৯০-এর বেশি বিজেপি কর্মী-সমর্থক। যা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এদিন মেদিনীপুর কলেজ মাঠে ফ্ল্যাশব্যাকে মোদীর সভার সেই প্রসঙ্গই টেনে আনলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন শুভেন্দু অধিকারীকে তিনিই হাতে ধরে মঞ্চে তোলেন। তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর যখন দূরত্ব বাড়ছিল তখন বারবার গেরুয়া শিবিরের দরজা খোলা রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন দিলীপ। এদিন অমিত শাহের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিলীপ দেড় বছর আগে মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে মোদীর সভার সেই স্মৃতি তুলে আনেন, বলেন "মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন, তখন মঞ্চ ভেঙে গিয়েছিল ভিড়ের চাপে। কিন্তু আজকের বিজেপি ভেঙে পড়ার মতো নয়। আজ অন্য জায়গা থেকে ভেঙে বিজেপিতে আসছে।"
সেবার বছর ঘুরলেই ছিল লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে জনসভার মধ্য দিয়ে রাজ্যে বিজেপি'র লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরে এরাজ্যে দ্রুত প্রভাব বেড়েছে বিজেপির। লোকসভা ভোটের সাফল্য বিধানসভা ভোটেও ধরে রাখতে মরিয়া। তাই ২০২১-এর লক্ষ্যে এখন থেকে ঘুঁটি সাজিয়ে চলেছে গেরুয়া শিবির। এরাজ্যে শাসক দলের ঘরে ভাঙন ধরিয়েই নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী ভোটে রাজ্যে পালা বদলের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরাও। আর সেই আত্মবিশ্বাসই এদিন মেদিনীপুর কলেজ মাঠে দেখালেন দিলীপ ঘোষ। মোদী মন্ত্রিসভার সেকেন্ড ইন কমান্ডের সামনেই বললেন এবার দল ভাঙার পালা অন্য শিবিরের!