দীর্ঘ কয়েক মাসের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল ১৯ ডিসেম্বর। মেদিনীপুর কলেজ মাঠে অমিত শাহের থেকে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ঠিক ৬ ডিসেম্বের এই মাঠেই সভা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। যেই সভায় গরহাজির ছিল গোটা অধিকারী পরিবার। সেদিন সভায় উপস্থিত না হয়ে কলকাতায় এসেছিলেন শুভেন্দু। আর এর দু'সপ্তাহ কাটেনি, সব নীরবতা ভেঙে দল বদলে সেই মাঠেই নিজের পুরনো দলকে নিশানা করলেন শুভেন্দু। মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে অমিত শাহের মঞ্চ থেকেই হুঙ্কার দিলেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’’ শুভেন্দুর গেরুয়া শিবিরে যাওয়া নিয়ে নিশ্চিত ছিল তৃণমূলও। তাই নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা দল ছাড়তেই এবার পরিবারতন্ত্র নিয়ে তাকেই নিশানা করল ঘালফুল শিবির।
বিজেপি নেতারা এরাজ্যে বরাবরই ভাইপোকে নিশানা করে থাকে। এদিন শুভেন্দুও সরাসরি নাম না নিয়ে সেই ধারাই বজায় রেখেছেন। সূত্রের খবর, দলের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি। আর তাতেই এবার অধিকারীতন্ত্রের পাল্টা তত্ত্ব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁথি, নন্দীগ্রাম অঞ্চলে অধিকারী পরিবারের দাপট কম নয়। এতদিন শুভেন্দু নিজে ছইলেন বিধায়ক ও রাজ্যের তিন দফতরের মন্ত্রী। সামলেছেন দলের একাধিক দায়িত্ব। এছাড়াও তাঁর বাবা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী দুজনেই তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ রয়েছেন। তাই অধিকারীতন্ত্রও যে কিছু কম ছিল নে সকথাই এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কল্যাণ। এই প্রসঙ্গে অমিত শাহকেও নিশানা করেছেন কল্যাণ। ছেলে জয় শাহ কীভাবে বিসিসিআই-এর সেক্রেটারি হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিমকোর্টের দুঁদে আইনজীবী।
বিজেপি নেতারা বরাবরই তৃণমূল শিবিরে ভাইপো প্রসঙ্গ তুলে পরিবারতন্ত্রের দিকে আক্রমণ শানিয়েছেন। এই নিয়ে কল্যাণ এদিন দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারে কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন। এরাজ্যের মানুষই তৃণমূলনেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়েছেন। এদিনই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে রাজ্যবাসীকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন শুভেন্দু। যেখানে দলের স্থবিরতা ও ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে মুখ খোলেন শুভেন্দু। এরও জবাব দিয়েছেন কল্যাণ। শুভেন্দুকে 'কাপুরুষ' আখ্যা দিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, আজ অমিত শাহের সামনে নত হয়ে থাকার মতই গত ১০ বছর ধরে তৃণমূলনেত্রীর সামনে মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করেছে শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু যে অপ্রতিরোধ্য নন সেই প্রসঙ্গে ২০০৪ সালে লক্ষ্ণন শেঠের কাছে শুভেন্দুর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কথাও তোলেন। শুভেন্দুর উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, বড় নেতা হলে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৪ সালে হারলেন কেন? তমলুক ও কাঁথি এলাকায় শুভেন্দুর তোলাবাজি নিয়েও মারাত্মক অভিযোগ আনেন কল্যাণ। এদিকে এদিনই শুভেন্দু ছাড়া একাধিক তৃণমূল বিধায়ক, নেতা ও কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। সেই তালিকায় নাম থাকা ওয়েজুল হক এবং বিধাননগরের প্রাক্তন কাউন্সলির দেবাশিস জানা গেরুয়য়া শিবিরে যাননি বলেই দাবি করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা নিয়ে বিজেপিকে আরও একবার মিথ্যেবাদীর দল বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে এদিন ভিড় হয়নি। বাইরে থেকে লোক এনেও ভর্তি করতে পারেননি শুভেন্দু অধিকারী, অমিত শাহরা এমন কথাও শোনা যায় কল্যাণের গলায়।