২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পাখির চোখ করে ঝাপিয়েছে বিজেপি। প্রতিদিনই শাসক শিবির ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি বাড়ছে আক্রমণের ঝাঁঝ। তবে বাংলায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে তা এখনও ঘোষণা করেনি গেরুয়া শিবির। যদিও রাজ্য সফরে এসে অমিত শাহ আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন বিজেপি ক্ষমতায় আসলে এই রাজ্যের ভূমিপুত্রই বসবেন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে। আর এর মাঝেই সৌমিত্র খাঁ প্রকাশ্য জনসভায় দিলীপ ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে বসেন। যা একেবারেই ভাল চোখে নিচ্ছে না গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্ব। দলীয় বৈঠকে এনিয়ে বিষ্ণুপুরের সাংসদের কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। শুধু তাই নয় সতর্ক করা হয়েছে সৌমিত্রকে। এমনকি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে হলে দলীয় সাংসদকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর গত শুক্রবার দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠকে সৌমিত্র খাঁ-র দিলীপ ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করার বিষয়টি উঠে আসে। এনিয়ে কলকাতাতেও দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা হয়। তারপরেই গত রবিবার সৌমিত্রকে এনিয়ে ধম দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে এক জনসভায় সৌমিত্র খাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘দিলীপ ঘোষ জঙ্গলমহলের ছেলে বলে অনেকে পাত্তা দেয় না। আমি বলছি, এই দিলীপ ঘোষ একদিন রাজ্য চালাবে, মুখ্যমন্ত্রী হবে। আর শুভেন্দুদার নেতৃত্বে বিজেপি ভেঙে যাবে।’ রবিবার বিজেপির দলীয় বৈঠকে হাজির ছিলেন শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ-সহ বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা। সেখানে শিবপ্রকাশ সৌমিত্র খাঁর কাছে এমন মন্তব্যের কারণ জানতে চান। প্রশ্ন করা হয়, অমিত শাহ যখন এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছাড়াই ভোটে লড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তখন সৌমিত্রর মন্তব্যের কারণ কী? কেন তাঁর আচরণকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে বিবেচনা করা হবে না?
অমিত শাহ বারবার দাবি করছেন, ২০০-র বেশি আসন পেয়ে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী কে হতে পারেন, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হবেন বাংলার ভূমিপুত্রই। তবে তিনি কারও নাম বলেননি। প্রসঙ্গত বিজেপির ক্ষমতায় আসলে কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী তা এখন বহুল চর্চিত বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী খোঁজা নিয়েও বিজেপির অন্দরে দড়ি টানাটানি রয়েঠে। কখনও দিলীপ ঘোষ, কখনও শুভেন্দু অধিকারী, কখনও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম হাওয়ায় ভাসলেও কোনও কিছুই খোলসা করেনি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দিলীপকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই তাই রীতিমত বিস্ফোরণ ঘটে।
সূত্রের খবর, অমিত শাহ , জেপি নাড্ডাদের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের স্পষ্ট নির্দেশ, মুখ্য়মন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনার প্রয়োজন নেই। কারণ, কোনও রাজ্যে যখন প্রথমবার ক্ষমতা আসার জন্য বিজেপি ভোটে লড়ে, তখন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরা হয় না। এটাই দলের রীতি। সেই হিসেবে এবার বাংলায় কাউকে মুখ্য়মন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নাও তুলে ধরা হতে পারে। বস্তত, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশের পর প্রকাশ্য়ে আর এ বিষয়ে আর কথাও বলছেন না দিলীপ ঘোষ -সহ বঙ্গ বিজেপি প্রথমসারির নেতারা। সেখানে সৌমিত্র খাঁ-র এই মন্তব্যকে তাই একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না গেরুয়া শিবির। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদান নিয়ে সৌমিত্র যে দাবি করছেন তার কারণও বিষ্ণুপুরের সাংসদের কাছে জানতে চায় দলীয় নেতৃত্ব। এনিয়ে না শুধরালে ভবিষ্যতে শাস্তির মুখে পড়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। যদিও এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।