আগামী পয়লা এপ্রিল রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। ভোট হবে একুশের নির্বাচনে সবচেয়ে হাইপ্রফাইল কেন্দ্র নন্দীগ্রামে। মঙ্গলবারই কমিশনের নির্দেশের প্রচার শেষ করতে হবে সব রাজনৈতিক দলগুলিকে। তাই সোমবার হোলির দিন সময় নষ্ট করতে রাজি ছিল না কোনও পক্ষই। সকাল থেকে নন্দীগ্রাম জুড়ে রোড শো করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, করেছেন তিনটি জনসভা। অন্যদিকে পিছিয়ে নেই নিজেকে স্থানীয় ছেলে বলে দাবি করা শুভেন্দু অধিকারীও। মন্দিরে পুজো দিয়ে সারা নন্দীগ্রাম ঘুরেছেন তিনি । বয়াল ১ ও বয়াল ২ নম্বর অঞ্চল, ভেটুরিয়া, জয়কালী ও ঘোলপুকুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে করেছেন পরপর পথসভা। নন্দীগ্রামে যখন প্রচারের উত্তাপ বাড়ছে তখনি কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। তৃণমূল শিবিরের অভিযোগ প্রচারের নামে রাজ্যে আসছে ভিনরাজ্য থেকে দুষ্কৃতীদের দল। শুভেন্দু অধিকারীরর হয়ে প্রচারে নেমেছে বহিরাগত গুণ্ডারা।
নন্দীগ্রাম নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল
সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। আগামী বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোট রাজ্যে। তার আগে নন্দীগ্রামকে টার্গেট করেই কমিশনের দরজায় তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েকমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বাংলায় ভোট প্রচারে ভিন রাজ্য থেকে আসছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতারা। তাঁদের সঙ্গে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে আসছে ভিনরাজ্যের মানুষ। তারাই সাধারণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করছে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে প্রচারে নেমেছে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। এই ভাবে ভয়ের পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে নির্বাচন সম্ভব নয়। তৃণমূল প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য শশী পাঁজাও অভিযোগ করেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিহরাগত দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ থেকে ঢুকেছে গুণ্ডাবাহিনী। এই বিষয়ে মধ্যপ্রদেশ ও বিহার পুলিশকে সূচিত করা হয়েছে। নন্দীগ্রামে যে বহিরাগতরা ঢুকেছে তাদের নাম কমিশনের হাতে এদিন তুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল প্রতিনিধি দলের।
বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে দাগি দুষ্কৃতীরা এলাকায় জড়ো হচ্ছে, আশ্রয় নিচ্ছে স্কুল, হোটেল, লজে। নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে এমনই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার দুপুরে তৃণমূলের তরফ থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এর সঙ্গে। ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন, রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শশী পাঁজা। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের উদ্বেগের বিষয় গুলি জানান তৃণমূল নেতৃত্ব। লিখিত আকারেও নির্বাচন কমিশনকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শাসক দল। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর সংবাদমাধ্যমকে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার সমাজবিরোধী দুষ্কৃতীরা ওখানকার স্কুলে, হোটেলে এবং লজে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি তৈরি হচ্ছে। এটা ফ্রী অন্ড ফেয়ার এলেকশন এর জন্য বাধা সৃষ্টি করবে"। মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আরও বলেন, "এরা সবাই বহিরাগত নয়, অধিকাংশই ওই জেলা এবং পার্শ্ববর্তী কিছু জেলার পরিচিত মুখ"। একইসঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলি থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর নাম করে বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের এই রাজ্যে এনে সন্ত্রাস সৃষ্টি ও এলাকাবাসীদের মনে ভীতির সঞ্চার তৈরি করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করে তৃণমূল নেতৃত্বের।
বহিরাগত নিয়ে অভিযোগ মমতারাও
বহিরাগত গুন্ডা ঢুকিয়ে ভোট করাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। একাধিকবার এই অভিযোগ শোনা গিয়েছএ তৃণমূল নেত্রীর গলাতে। সোমবারও একই অভিযোগ করতে শোনা গিয়েছে মমতাকে। নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলনেত্রী দাবি করেছেনে, ভিনরাজ্যের পুলিশের উর্দি কেনা হচ্ছে। বিজেপি-র গুন্ডারা মোটরবাইক নিয়ে গুন্ডামি করছে। কমিশনের অধীনে পুলিশ কাজ করছে। বাহিনীর উর্দি পরিয়ে লোক ঢোকানোর ছক কষছে বিজেপি, এমন মারাত্মক অভিযোগও নন্দীগ্রাম থেকে করেছেন মমতা।
পাল্টা জবাব শুভেন্দুর
রবিবার অমিত শাহ বলেছিলেন, প্রথম দফার ভোটে ৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ২৬টি পাচ্ছে। এদিন শুভেন্দু দাবি করেন, তা মহত্ব দেখিয়ে আসনে ছাড় দিয়েছেন। বিজেপি আসলে ৩০টি আসনেই জয়লাভ করবে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিরাগত বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি শুভেন্দু। নিজেকে ভূমিপুত্র দাবি করে অধিকারী বাড়ির মেজছেলে বলেন, ‘আমি স্থানীয় ছেলে এখানেই থাকব। বাকি যাঁরা উড়ে এসেছেন, উড়ে চলে যাবেন।'