অবশেষে ঘটিয়েই ফেললেন সেই কাণ্ড! মন্ত্রীত্ব তো আগেই ছেড়েছিলেন, বিধায়কপদ কবে ছাড়বেন তাই নিয়েই চলছিল আলোচনা। সেই যবনিকা পতন করলেন শুভেন্দু। বুধবার বিকেলে বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। বুধবার বিকেলেই বিধানসভায় গিয়ে রিসিভ সেকশনে স্তফাপত্র জমা দেন শুভেন্দু। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন না বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সচিবের কাছে গিয়েই ইস্তফাপত্র জমা দেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও বিধানসভায় অধ্যক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র জমা না দেওয়ায় তা নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এদিন শুভেন্দু যখন বিধানসভায় যান তখন সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই রিসিভ সেকশনে ইস্তফাপত্র জমা দেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই কারণে শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার পর তা গ্রহণ করা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে এদিন ই-মেলেও অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইস্তফাপত্র পাঠান শুভেন্দু।
এদিন ইস্তফাপত্র দেখালেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি শুভেন্দু অধিকারী। বরং বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের স্করপিও গাড়িতে করে বেরিয়ে যান তিনি। এদিন শুভেন্দুর সঙ্গী ছিলেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও। তবে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকাকালীন কেন শুভেন্দু বিধানসভায় এলেন না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ বিধায়ক স্পিকারের হাতে ইস্তফাপত্র দিলে তা গ্রহণ করতে বাধ্য তিনি। কিন্তু এদিন শুভেন্দু রিসিভ সেকশনে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ায় তা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে।
শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে রয়েছে। দলের সাথে তাঁর যে দূরত্ব বাড়ছে , তা উভয় তরফ থেকেই বেশ কিছুদিন ধরে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছিল। গত কয়েকদিনে দলের ব্যানারের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসংযোগ চালিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। ‘ইঙ্গিতবাহী’ মন্তব্য করে তাঁর দল ছাড়ার জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন। আর এই আবহেই গত মাসের শেষে মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে সেই জল্পনাকে আরও তুঙ্গে তুলে দিয়েছেন। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভায় রাজ্য পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু ৷ সবকটি দফতর থেকেই পদত্যাগ করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তার আগেই হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন-এর চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেন শুভেন্দু। সরিয়ে নেন তাঁকে দেওয় জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তাও।
তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে শুভেন্দু সম্পর্কের বরফ গলাতে এরপরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর উদ্যোগেই অভেষক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসানো হয় শুভেন্দুকে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও। এই বৈঠকের পরও অবশ্য মানভঞ্জন করা যায়নি নন্দীগ্রামের বিধায়কের। পরদিন সৌগত রায়কে হোয়াটসঅ্যাপে শুভেন্দু জানিয়ে দেন, ‘একসঙ্গে কাজ করা মুশকিল, মাফ করবেন।’ এরপরেই শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনায় ইতি টানতে চাইছে তৃণমূল তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলে যে শুভেন্দু অধ্যায় শেষ হওয়া সময়ের অপেক্ষা তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে কবে বিধায়ক পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন তা নিয়ে ছিল জল্পনা। অবশেষে সেই জল্পনায় জল ঢাললেন শুভেন্দু। তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তবে বজায় রেখে দিলেন বিতর্ক। শুভেন্দু কি গেরুয়া শিবিরে যাচ্ছেন, সেই উত্তর অবশ্য এদিনও দেননি নন্দীগ্রামের বেতাজ বাদশা। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে আসছেন বিজেপি নেতা অমিত শাহ। শুভেন্দুর গড়েও যাবেন তিনি। সেখানেই শুভেন্দু বিজেপি তে যোগ দেন কিনা তার দিকেই তাকিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতি।