বৃহস্পতিবার বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েও শুক্রবার রাতে ইউটার্ন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। বিক্ষোভে ইতি টেনে দলের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করতে দেখা গিয়েছিল বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। শুধু তাই নয়, যে ফেসবুকে নিজের ক্ষোভ উগড়েছিলেন অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিতে আসা শতাব্দী সেই সোশ্যাল সাইটেই দল ও নেতৃত্বের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা চালান বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। শনিবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের একজোট হওয়ার বার্তা দেন। জানান, ক্ষোভ – বিক্ষোভ আমরা দলের মধ্যেই মেটাবো। আনুগত্য প্রদর্শনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুরস্কার পেয়ে গেলেন শতাব্দী। জানা যাচ্ছে তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে এবার এন্ট্রি হল শতাব্দী রায়ের। বীরভূমের সাংসদকে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি করা হয়েছে। সহ সভাপতি হচ্ছেন মোয়াজ্জেম হোসেন ও শঙ্কর চক্রবর্তী।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাখির চোখ করে দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেই এবার শতাব্দীকে নিয়ে আসল তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবারই শতাব্দীর ক্ষোভ প্রষমনে একের পর এক তৃণমূল নেতৃত্বের ফোন যায় তাঁর কাছে। শুক্রবার রাতেই নিজের ত্যামাক স্ট্রিটের অফিসে শতাব্দীর মানভঞ্জন করতে সক্ষম হন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে দেখা যায় দলীয় সাংসদকে। বলেন, ‘আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যেভাবে তিনি সমস্যা শুনেছেন, আলোচনা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে আমি নিশ্চিত তরুণ নেতাটি এখন যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও পরিণত। নতুন প্রজন্মের এমন নেতার নেতৃত্ব দলকে শক্তিশালী করবে।’
বেসুরো গেয়ে শতাব্দী দলে থেকে পদ পেলেও আসানোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্রর ডানা ছাঁটা কিন্তু অব্যাহত রয়েছে তৃণমূলে। আসানসোলের পুরপ্রশাসক থেকে ইস্তফা দিয়ে শুভেন্দুর দল ছাড়ার দিন তৃণমূলের সদস্যপদ ছেড়েছিলেন জিতেন্দ্রও। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ককেও দেখা গিয়েছিল ইউটার্ন করতে। দলের সঙ্গে সংঘাত মিটিয়ে বন্ধুত্বের হাতা বাড়ালেও আসানসোল শিল্পাঞ্চলের এই নেতা কিন্তু নিজের পদ ফিরে পাননি। বরং একের পর এক খোয়াতে হচ্ছে তাঁকে। ভোটের আগে পশ্চিম বর্ধমানে দলের নতুন জেলা কমিটিতে স্থান পেলেন না শিল্পাঞ্চলের ডাকাবুকো এই নেতা।
পশ্চিম বর্ধমানে দলের নতুন জেলা কমিটিতে স্থান পেলেন না জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এর আগে জেলা সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। ইস্তফা দেন আসানসোল পুরসভার প্রশাসক পদ থেকেও। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটিতে এবার জেলা সভাপতি করা হয়েছে অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। চেয়ারম্যান হচ্ছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। এমনকি, জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিধানসভা আসনে কোঅর্ডিনেটর করা হয়েছে দুর্গাপুর-পশ্চিমের বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে। দলের প্রতি জিতেন্দ্রর বিদ্রোহের জেরেই তাঁর একের পর এক পদে কোপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রথমে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তারপর পদ ছেড়ে ইস্তফা, এরপর কলকাতায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে আছি বললেও ফেসবুকে উল্টো সুর গাইতে দেখা গিয়েছিল। সেই কারণেই আসানসোলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ও পশ্চিম বর্ধমানের তাবড় ব্যক্তিত্ব জিতেন্দ্র তিওয়ারির পদ থেকে অপসারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু জিতেন্দ্র তিওয়ারি নিজের ইস্তফা পত্র ফিরিয়ে নেননি, তাই এমন সিদ্ধান্ত। শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর সাক্ষাৎই কি তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিয়েছে দলের অন্দরে এমন প্রশ্নও উঠছে। বেসুরো হলে দলে যে জায়গা মিলবে না তাই যেন স্পষ্ট করে দিচ্ছে ঘাসফুল শিবির। যদিও পদ হারিয়ে জিতেন্দ্র অবশ্য বলছেন, 'দিদির সৈনিকের থেকে বড় কোনও পদ হয় না। দলের প্রবীণদের পদপ্রাপ্তিতেই আমি পদ খুঁজে পাই।'