বিধানসভা ভোটের আগে জেলা সফরে বেরিয়েছেন রাজ্যপাল। বর্ধমানের পর বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে বর্গভীমা মন্দিরে সস্ত্রীক পুজো দেন জগদীপ ধনখড়। পুজো দেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী ঠিকমতো তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন ধনখড়। আর এদিন বিকেলেই আচমকা রাজভবনে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দু'জনের মধ্যে প্রায় ১০ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। নবান্নে সূত্রে জানানো হয়েছে, এটি সম্পূর্ণভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে মমতার রাজভবনে যাওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ হঠাৎ রাজভবনে হাজির হন মমতা। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে পৌঁচচ্ছে। করোনা মোকাবিলা থেকে আমফান দুর্নীতি, কেন্দ্রীয় সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প রাজ্যে লাগু না করা, বাংলার আইন-শৃঙ্খলা সহ নানা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই সরব হতে দেখা যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এদিনও কোলাঘাটে সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান মেনে কাজ করছেন না।’ এছাড়া এদিন ‘বহিরাগত’ ইস্যু–সহ আমফান, করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধনখড়। নাম না করেই বহিরাগত ইস্যুতে বুধবার তৃণমূলকে নিশানা করেছেন ধনখড়। তৃণমূলনেত্রী বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এরাজ্যে আমগন নিয়ে বারবার বহিরাগত ইস্যু তুলছেন। সেই প্রসঙ্গেই ধনখড়কে এদিন বলতে শোনা যায়, ভারতের মধ্যে কেউ বহিরাগত নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের মতে, এমন কোনও কাজ করা উচিত নয় যা সংবিধানের বিপরীত ভাবনার সামিল।
এর আগে একাধিকবার ট্যুইটেও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন ধনখড়। বারবার অভিযোগ তুলেছেন সরকারি আধিকারিকদের দলদাসে পরিণত হওয়ার বিষয়টিকে। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে দেখা গেছে তৃণমূলকেও। এই আবহে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ তাই অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছে ওয়াকিবহল মহল। যদিও এর আগে ২০১৯ সালে কালীঘাটে নিজের বাড়ির কালীপুজোয় রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাহ হাকিম রাজ্যপালকে শুভেচ্ছা জানাতে রাজভবনে গিয়েছিলেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি ট্যুইটও করেন রাজ্যপাল।
এরআগে গত ১৫ আগস্টও মমতাকে সংঘাত ভুলে রাজভবনে যেতে দেখা গিয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় সস্ত্রীক হাজির হয়েছিলন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।