
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি পরিচয়পত্রের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী আসলে একজন বাংলাদেশি নাগরিক। এই দাবির সমর্থনে যে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের। কথিত এই কার্ডটি শেখ সুজা নামের কোনও ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত।
পরিচয়পত্রের ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, শেখ সুজাই আসলে বর্তমানে সুজন চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে কথিত পরিচয়পত্রের ছবিটির নিচে একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটও যুক্ত করা হয়েছে। কথিত সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “কমিউনিস্ট নেতা সুজন চক্রবর্তীর আসল নাম শেখ সুজা!!!! সংবাদ প্রতিনিধি:- পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা সুজন চক্রবর্তীর পরিচয় নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার রফিক মিঞা, তার দাবী অনুসারে সুজন চক্রবর্তীর আসল নাম শেখ সুজা, রফিক মিঞার ভাষ্য অনুযায়ী ওরা একই এলাকায় প্রতিবেশী হিসেবে ছিল। বিস্তারিত ভেতরের পাতায়....।”
এই ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “কিছু বুঝতে পারছেন।”
অনেকেই একই দাবিটি ছবিটি শেয়ার করেছেন।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পরিচয়পত্রটি ভুয়ো। পরিচয়পত্রে যে আইডি নম্বর দেওয়া হয়েছে বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশি ফ্যাক্ট চেকারদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে।
সত্য উন্মোচন
প্রথমেই বলে রাখা দরকার, কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে “কমিউনিস্ট নেতা সুজন চক্রবর্তীর আসল নাম শেখ সুজা!!!!” শীর্ষক কোনও প্রতিবেদনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল পরিচয়পত্রের ছবিতে প্রথমেই যে বিষয়টি সবথেকে সন্দেহের তা হল—কথিত আইডি কার্ডের উপরে লেখা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ লেখা শব্দবন্ধে ‘গণ’ বানানটিতে ভুল করে দন্ত-ন ব্যবহার করা হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘গনপ্রজাতন্ত্রী’। কোনও দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন মারাত্মক বানান ভুল হবে, এই বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, এবং অস্বাভাবিক। যা থেকে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
এর পরবর্তী ধাপে কথিত পরিচয়পত্রে থাকা আইডি নম্বরের বিষয়ে খোঁজ চালানো হয়। এই আইডি নম্বরটি ছিল, 14226591132, যা ১১ ডিজিটের অর্থাৎ ১১ সংখ্যার। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট, এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পরিচয়পত্রে আইডি নম্বর ১০, ১৩ বা ১৭ ডিজিটের হয়। কখনই ১১ সংখ্যা বা ১১ ডিজিটের আইডি নম্বর হয় না। এই বিষয়টি থেকে আরও পরিষ্কার হয় যে কথিত পরিচয়পত্রটি ভুয়ো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এর পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশের একটি আসল জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে কথিত শেখ সুজার পরিচয়পত্রের তুলনা করা হয়। উভয়ের তুলনা করলে কয়েকটি মূল পার্থক্য থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভাইরাল পরিচয়পত্রটি ভুয়ো। প্রথমত, আসল পরিচয়পত্রে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বানানটি সঠিক ছিল।
সেই সঙ্গে ‘নাম, পিতা, মাতা’ লেখা ফন্টের সঙ্গে নাগরিকের নাম, জন্মতারিখ লেখা ফন্ট হুবহু মিলে যাচ্ছিল। পাশাপাশি, জন্মতারিখ এবং আইডি নম্বরটি ছাপা ছিল লাল কালিতে। নম্বরটি ছিল ১৭ ডিজিটের। কিন্তু কথিত ভাইরাল আইডি কার্ডে সব তথ্যই ছাপা ছিল ধূসর রঙের কালিতে। সেই সঙ্গে ‘নাম, পিতা, মাতা’ লেখা ফন্টের সঙ্গে নাগরিকের তথ্য সংক্রান্ত ফন্ট মিলছিল না।
ভাইরাল পরিচয়পত্রের সত্যতা নিয়ে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্ট চেকার তানভীর মাহতাব আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আমাদের একই বিষয় নিশ্চিত করেন। তানভীর বলেন, “এটা স্পষ্টতই ভুয়া এনআইডি। পরিচয়ের তথ্যগুলো যে ফন্টে রয়েছে সেই ফন্ট বাংলাদেশের প্রচলিত এনআইডিতে থাকে না৷ তাছাড়া, বাংলাদেশের এনআইডি ১০/১৩/১৭ ডিজিটের হয়৷ এখানে ১১ ডিজিটের। এবং এই নম্বর যাচাই করে এর বিপরীতে কোনো এনআইডি থাকার প্রমাণও পাওয়া যায়নি।”
অর্থাৎ সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে ভাইরাল পরিচয়পত্রের ছবিটি ভুয়ো, এবং বাস্তবে এই পরিচয়পত্রের কোনও অস্তিত্ব নেই।
বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর আসল নাম শেখ সুজা। প্রমাণস্বরূপ ছবিতে তাঁর বাংলাদেশি পরিচয়পত্র দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল পরিচয়পত্রের ছবিটি ভুয়ো। এখানে ১১ ডিজিটের আইডি নম্বর রয়েছে। বাংলাদেশের পরিচয়পত্রের আইডি নম্বর ১০, ১৩ বা ১৭ ডিজিটের হয়।