ফ্যাক্ট চেক: বিহারে পুলিশের উপর জনতার হামলা দাবিতে ছড়াল রাজস্থানের পুরনো অসম্পর্কিত ভিডিও

ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বিহারের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে ক্ষুদ্ধ জনতা সে রাজ্যের পুলিশ কর্মীদের তাড়িয়ে মারধর করছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বিহারের পাবলিক পুলিশেখ দুলাই #Bihar #biharvidhansabhaelection2025।” (সব বানান অপরিবর্তিত) সরাসরি উল্লেখ না করা হলেও ‘#biharvidhansabhaelection2025’ মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ভিডিওটি যে সদ্য সমপ্ত বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তা বোঝানো হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে বিহার তথা বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সেটি চলতি বছরের ৩ জুলাই রাজস্থানের টঙ্ক জেলার রাজমহল গ্রামে ট্রাক্টরের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের পুলিশ কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভের দৃশ্য।  

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৩ জুলাই রাজস্থানের জয়পুর ভিত্তিক সাংবাদিক বালমুকুন্দ জোশীর এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায় সেটি রাজস্থানের টঙ্ক জেলার রাজমহলের ঘটনা। 

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও এবং এর স্ক্রিনশট-সহ নবভারত টাইমস এবং লাইভ হিন্দুস্তান-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২ জুলাই রাত ১০টার দিকে রাজস্থানের টঙ্ক জেলার রাজমহল গ্রামে নুড়ি তথা পাথর বোঝাই একটি ট্রাক্টরের ধাক্কায় পাপ্‌পু গুর্জর (২৭) নামক এক যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরেরদিন অর্থাৎ ৩ জুলাই ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী এবং মৃতের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিয়ে দেওলি-রাজমহল সড়ক অবরোধ করে। 

মূলত দোষীদের কঠোর শাস্তি, মৃতের পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদানের দাবিতে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এমতো অবস্থায় পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন মহিলা তাদেরকে ধাওয়া করার পাশাপাশি হেনস্তা করে বলে অভিযোগ। তখন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করেন। অন্যদিকে প্রাশাসন সূত্রে খবর, এই মৃত্যুর ঘটনাটি কেবলমাত্র দুর্ঘটনা না হতেও পারে। বরং নুড়ি বা পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের ফলাফলও হতে পারে। কারণ নিহত ব্যক্তি এবং ট্রাক্টর চালক উভয়ই নুড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বিহারে পুলিশের উপরে ক্ষুদ্ধ জনতার হামলা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে রাজস্থানের পুরনো অসম্পর্কিত ভিডিও।