
বিহারের নওয়াদা জেলায় নাম-পরিচয় জেনে এক মুসলিম কাপড় বিক্রেতাকে বেধড়ক মারধর (মব লিঞ্চিং) করা হয় বলে অভিযোগ সামনে আসে। গত ৫ ডিসেম্বর কাজ শেষে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে রোহ থানা এলাকার ভাট্টাপার গ্রামে মহম্মদ আতহার হোসেন নামক ওই ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলেন ১৫-২০ জন ব্যক্তি। এরপর তারা সকলে মিলে আতারের গায়ে গরম রডের ছ্যাঁকা দিতে থাকে, এমনকি তাঁর দু’টি কানও কেটে দেয়। অন্যদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় আতহারের। আর আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও ক্লিপ।
যেখানে বেশ কয়েকজন মিলে এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন এবং বেধড়ক মারধর করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি বিহারের নওয়াদা জেলার ভাট্টাপার গ্রামে মহম্মদ আতহার হোসেনের মব লিঞ্চিংয়ের দৃশ্য। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বি'হারে মুস'লিম কাপড় ব্যবসায়ীকে নির্যা'তন করে হ'ত্যা করল হি'ন্দুত্ববাদীরা! ভা'রতের বিহা'র প্রদেশের নাল'ন্দা জেলার নাওয়াদা এলাকায় এক মুস'লিম কাপড় বিক্রেতাকে একদল হি'ন্দুত্ববাদী নৃশং'সভাবে পি'টিয়ে আহত করার ৬ দিন পর গত ১২ ডিসেম্বর হাসপাতালে মৃ'ত্যুবরণ করেন।…” (সব বানান অপরিবর্তিত)
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি বিহারের নওয়াদায় মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হয়ে মৃত মহম্মদ আতহার হোসেনের নির্যাকনের নয়। বরং এটি গত ৭ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রির অভিযোগে শেখ রিয়াজুল নামক এক হকারকে মারধরের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবি সম্পর্কে জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এবিপি অনন্দের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “গীতা পাঠের দিন 'আমিষ খাবার বিক্রি' করায় বিক্রেতাকে মার? 'ব্রিগেডে চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধর, স্টল ভাঙচুর', চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল। প্যাটিস বিক্রেতাকে মার, ময়দান থানায় অভিযোগ সিপিএমের।” এমনকি সংবাদ প্রতিদিন এবং কলকাতা টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও এই একই ভিডিও একই তথ্য-সহ পাওয়া যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে গত ৯ ডিসেম্বর অনন্দবাজার পত্রিকায় ভাইরাল ভিডিও-র স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রির অভিযোগে শেখ রিয়াজুল এবং মহম্মদ সালাউদ্দিন নামক দুই হকারকে মারধর করার অভিযোগ সামনে এসেছে। তারা উভয়ই ময়দান থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি, অনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী ভাইরাল ভিডিওর আক্রান্ত ব্যক্তি হলেন হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা শেখ রিয়াজুল।
অন্যদিকে, গত ১১ ডিসেম্বর নিউজ ১৮ বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ময়দান থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম সৌমিক গোলদার, স্বর্ণেন্দু চক্রবর্তী এবং তরুণ ভট্টাচার্য। সৌমিকের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায়, স্বর্ণেন্দু থাকেন অশোকনগরে। তরুণ হুগলির উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। গত রবিবার ব্রিগেডের ওই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি এবং ভিডিও-র ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা বলে সূত্রের খবর। যদিও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক হাজার টাকার বন্ডের বিনিময়ে ধৃতদের জামিন প্রদান করে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত।
এখানে উল্লেখ্য এবং এটা সত্যি যে, সম্প্রতি বিহারের নওয়াদা জেলরা রোহ থানার ভাট্টাপার গ্রামে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হয়ে মহম্মদ আতহার হোসেন নামক এক ব্যক্তির মৃত্য হয়। তবে ভাইরাল ভিডিওটি কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে এক চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের দৃশ্য।
এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিহারের নওয়াদায় মৃত মহম্মদ আতহার হোসেনের মব লিঞ্চিংয়ের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে কলকাতার ভিন্ন ঘটনার ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিহারের নওয়াদায় মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হয়ে মৃত মহম্মদ আতহার হোসেনের নির্যাতনের দৃশ্য।
ভিডিওটি বিহারের নওয়াদায় মব লিঞ্চিংয়ের শিকার মহম্মদ আতহার হোসেনের নয়। বরং এটি গত ৭ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রির অভিযোগে শেখ রিয়াজুল নামক এক হকারকে মারধরের দৃশ্য।