স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক সঙ্কটে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের হাত পেতে দিতে অনেক মানুষকেই দেখা যায়। অনেকে সময় মানুষের কাছে পৌঁছতে বড় মাধ্যমও হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি এমনই একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে যেখানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুকে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।
ওই শিশুর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে সঙ্গে লেখা হয়েছে যে বাচ্চা ছেলেটির অনিক দাস। সে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। বাবা বাবুল দাস ও মা রীনা মন্ডল গার্মেন্টস কর্মী এবং অনিক দাস বহুদিন ধরে কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেখানে অনেক কম খরচে চিকিৎসা সম্ভব। মোট ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লাগবে।
এরপর একটি ফোন নম্বর দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিট্যাল পেমেন্ট ব্যবস্থা বিকাশ ওয়ালেটে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে ও বলা হচ্ছে যে আরও ২-৩ লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী প্রত্যেকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এটি বাংলাদেশের কোনও ঘটনা নয়। বরং ছবিগুলি ভারতের ও এক ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে ভুয়ো গল্প ফাঁদা হয়েছে।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ছবিগুলোকে রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্যে খুঁজলে সেগুলো Ketto নামের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। Ketto হলো একটি ফান্ডরেইসার বা তহবিল সংগ্রাহকারী ওয়েবসাইট যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ভারতীয় রোগীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
ছবিগুলি সহ এখানে একটি তহবিল সংগ্রহের ক্যাম্পেন চালু করা হয়েছিল যা আমাদের নজরে আসে। সেই ক্যাম্পেইনে লেখা হয়, শিশুটির নাম কেভিএসএস শ্রিয়ানস। এবং ৬ বছরের এই শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত।
তথ্য অনুযায়ী, শ্রীয়ানস ডাক্তারি ভাষায় যে রোগে আক্রান্ত তার নাম একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া। এই রোগের কারণে কিছুদিন ছাড়া ছাড়াই তাকে ব্যয়বহুল ও বেদনাদায়ক থেরাপির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তার চিকিৎকার জন্য আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।
এরপর আমরা ওই ক্যাম্পেইনের আপডেট অংশটি খতিয়ে দেখি যেখানে রোগীর বর্তমান শারীরিক অবস্থায় বিষয়ে কিছুদিন বাদে বাদে জানানো হয়। সেখানে দেখা যায়, বছর দুয়েক আগে ক্যাম্পেইন আয়োজকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রিয়ানসের চিকিৎসা প্রায় হয়ে এসেছে এবং সে বাড়ি ফিরে নিজের কিছু কিছু কাজ নিজেই করতে শুরু করেছে।
বছর খানেক আগে দেওয়া একটি আপডেট অনুযায়ী, শ্রিয়ানসের শরীর আগের থেকে অনেক ভালো, তবে সংক্রমণ এড়াতে তাকে এখন স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘর থেকেই তার চিকিৎসা চলছে।
এই ক্যাম্পেইনের শেষ আপডেট মাস দুয়েক আগে এসেছিল। সেখানে জানানো হয়, মাসে একবার করে শ্রিয়ানসের নিয়মিত চেকআপ চলছে এবং সে স্কুলেও যাচ্ছে। এখন সে প্রায় অনেকটাই সুস্থ।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও যোগ নেই। এর আগেও একাধিকবার একইভাবে ভারতীয় রোগীদের ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশে আর্থিক জালিয়াতির চেষ্টা করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখানে দেখা যাবে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে অনিক দাস যে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। প্রাণ বাঁচাতে আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন।
ছবিগুলি ভারতে একদা চিকিৎসাধীন শ্রিয়ানস নামের এক শিশুর যে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। এখন তার স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালোর দিকে।