
সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। এই ভিডিওগুলির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, ভোটের ফলাফলের পর বিহারের সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে এসেছে।
তেমনই একটি পোস্টে দুটি ভিডিও-র কোলাজ শেয়ার করা হয়েছে। প্রথম ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোনও জায়গায় অন্তত শ’খানেক মানুষ একটি গেট জোর করে ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন। জনাকয়েক পুলিশকর্মী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
এই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি বিহারের রাজধানী পটনায় বিজেপির সদর দপ্তরের বাইরের দৃশ্য যেখানে সাধারণ মানুষ ঘেরাও করে বিক্ষোভ জানাচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে হনুমানগুলো লাড্ডু বিলাচ্ছিলো-নাচানাচি করছিল!! কিন্তু বিহারের হনুগুলোকে নাচানাচি করতে সেভাবে দেখেছেন কি!? আসলে বিহারীরা মহাজোটকে ভোট দিয়েছিল--কিন্তু ম্যাজিকে বিজেপি জিতে গেছে!! দেখুন বিহারে বিজেপির প্রধান দপ্তর ঘেরাও করা হচ্ছে।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, দাবিটি মিথ্যে। প্রথমত, বিহার ভোটের পর বিজেপি সদর দফতরে বিক্ষোভের কোনও ঘটনা ঘটেনি। দ্বিতীয়ত, ভাইরাল ভিডিও-র প্রথমটি উত্তরাখণ্ডের, দ্বিতীয়টি লাদাখের।
সত্য উন্মোচন
প্রথম ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। ভিডিওগুলি গত ২৮ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়েছিল। যা থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে ভিডিওটি বিহার নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কারণ বিহার ভোটের ফলাফল ১৮ নভেম্বর প্রকাশ পেয়েছিল।
ভিডিওতে থাকা ক্যাপশন অনুযায়ী, এই ভিডিওটিতে উত্তরাখণ্ডের পিতোরগড়ের যেখানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে এবং স্থানীয় জেলাশাসকের অফিসের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকছে।
পোস্টগুলির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে উত্তরাখণ্ডে সাত বছর বয়সী এক মেয়েকে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় দুই অভিযুক্তের খালাস করে দেওয়া যায়। একাধিক নিউজ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার হাইকোর্টে পুনর্বিবেচনার আবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই মামলাটিকে ছোট নির্ভয়া/নান্নি পরী/লাডলি মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও এই বিক্ষোভের বিষয় নিয়ে অন্য দিক তোলা ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল।
আজতকের ইউটিউব চ্যানেলেও এই বিক্ষোভ নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল যা নিচে দেখা যাবে।
দ্বিতীয় ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে এর রিভার্স সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও একাধিক এক্স হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। রণবিজয় সিং নামের এক সাংবাদিক গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভিডিওটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, এটি লাদাখের লেহ-র বিজেপির সদর দফতরের ভিডিও। যেখানে জেন জ়ি বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপির সদর দফতরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনেও এই একই ঘটনার ছবি পাওয়া যায়। খবর থেকে জানা যায়, বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো এবং ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে এই অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল।
বিহার ভোটের পর পটনায় বিজেপির দফতরে কোনও ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে, এমন কোনও খবরও পাওয়া যায়নি। ফলে স্পষ্টতই বলা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি মিথ্যে দাবিতে ভাইরাল হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিহার ভোটের পর নির্বাচনে কারচুপির দাবিতে পটনায় বিজেপির সদর দফতরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
পটনায় এমন কোনও বিক্ষোভ হয়নি। ভাইরাল দুটি ভিডিও গত সেপ্টেম্বর মাসের। প্রথমটি উত্তরাখন্ডের, দ্বিতীয়টি লাদাখের লেহ-র।