
সম্প্রতি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। এই ভিডিওগুলির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, ভোটের ফলাফলের পর বিহারের সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে এসেছে।
প্রথম ভিডিও: এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কোনও একটি সরকারি ভবনের সামনে একদল যুবকদের ভাঙচুর চালাতে। ভিডিওর পরবর্তী অংশে ওই সরকারি ভবনের উপরে উঠে বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডব চালাতে, এবং ভাঙচুর করতেও দেখা যায়। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “বাংলা মানুষ চোর হইতে সাবধান ভোট চুরির পারিনাম চালু হয়ে গেছে, শুধু দিল্লির অপেক্ষা। জয় বাংলা।”
দ্বিতীয় ভিডিও: এই ভিডিওটি কোনও বহুতলের উপরের অংশ থেকে রেকর্ড করা। ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যে নিচে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, বিহারে নেপালের মতো হতে চলেছে।” একই ধরনের দাবিতে এই ভিডিও আরও অনেকেই শেয়ার করেছেন।
তৃতীয় ভিডিও: এই ভিডিওটি কোনও শহরাঞ্চলের, যেখানে অন্ধকারের মধ্যে শয়ে-শয়ে মানুষদের মশাল হাতে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “বিহারে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মশাল হাতে রাস্তায় যুবকরা।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল হওয়া তিনটি ভিডিও পুরনো এবং বিহার নির্বাচনের সঙ্গে অসম্পর্কিত। প্রথম ভিডিওটি নেপালের, দ্বিতীয়টি অসমের এবং তৃতীয়টি রাজস্থানের।
সত্য উন্মোচন
প্রথম ভিডিও: প্রথম ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে এতে ভাঙচুর হওয়া ফলকে নেপালের জাতীয় পতাকা দেখা যায়। সেই সঙ্গে যে ভবনের উপর বিক্ষোভকারীদের উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল সেখানেও নেপালের জাতীয় পতাকা রয়েছে। যা থেকে অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি নেপালের হতে পারে।
এই বিষয়ে বিশদে তথ্য অনুসন্ধান করা হলে নেপালের একটি রেডিও স্টেশনের ফেসবুক পেজে ওই একই ভবনে ভাঙচুরের একাধিক পাওয়া যায় যা গত ৯ সেপ্টেম্বর নেপালে হওয়া আন্দোলনের সময় পোস্ট করা হয়েছিল। পোস্ট করে লেখা হয়, “চিতওয়ানে প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাঙচুর।”
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে কাঠমান্ডু পোস্টের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নেপালে আন্দোলন চলাকালীন ৯ সেপ্টেম্বর চিতওয়ান জেলা-সহ একাধিক জেলায় প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে ভিডিওটি নেপালের। বিহারের নয়।
দ্বিতীয় ভিডিও: দ্বিতীয় ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে একই ভিডিও ২০২৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বরের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পাওয়া যায়। যা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে এর সঙ্গে বিহার নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি প্রয়াত গায়িক জুবিন গর্গের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ক্যাপশন-সহ শেয়ার করা হয়েছিল।
তৃতীয় ভিডিও: তৃতীয় ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে একই ভিডিও ২০২৫ সালে ২৫ সেপ্টেম্বরের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট হয় যে ভিডিওটি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। এর থেকে পরিষ্কার হয় যে ভিডিওটি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, রাজস্থানের ঝালাওয়ারে স্কুল দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে জয়পুরে একটি মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এটি সেই মিছিলের দৃশ্য।
ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে তিনটি পুরনো, অপ্রাসঙ্গিক, এবং অসম্পর্কিত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিহারে বিক্ষোভের দাবি করা হচ্ছে, যা মিথ্যা।
এই ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ জানিয়ে বিহারের মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
দাবি ও ভিডিও উভয়ই ভুয়ো। প্রতিটি ভিডিও ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। প্রথম ভিডিওটি নেপালের আন্দোলনের। দ্বিতীয় ভিডিওটি জুবিন গর্গের শেষযাত্রার। তৃতীয় ভিডিও রাজস্থানের জয়পুরের।