পার্কস্ট্রিটে বড়দিন মানেই আলোর রোশনাই। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে শুরু করে মল্লিক বাজার পর্যন্ত গোটা রাস্তা জুড়ে ক্রিসমাস থিমে LED আলো ও সাজসজ্জা। অনেকই জানেন না, এই আলোরও একটি বড় অংশ আসে চন্দনগরের শিল্পীদের মারফত। আলোয় আলোয় সাজানো পার্কস্ট্রিট যেন কলকাতার বড়দিনের পরিচয়পত্র।
এবারও বড়দিনে আলোর মালায় সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট। খ্রিসমাস ইভ উপলক্ষ্যে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় পার্কস্ট্রিট-সহ ময়দান, ধর্মতলা চত্বরে। তাই আলোকমালার পাশাপাশি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে পার্কস্ট্রিট।
পার্কস্ট্রিটেই বসে ভারতের অন্যতম বড় ক্রিসমাস কার্নিভাল। বড়দিনের সপ্তাহজুড়ে পার্কস্ট্রিট কার্যত উৎসবের মঞ্চে পরিণত হয়। অ্যালেন পার্কে শোনা যায় লাইভ মিউজিক, ব্যান্ডের পারফরম্যান্স, কোয়ার গ্রুপের ক্যারল। সেই সুর রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে, আলাদা এক vibe তৈরি করে। অনেকেই সেটা বেশ পছন্দ করেন।
একেবারে যেন দুর্গাপুজোর ভিড় ৷ ফি বছরের মতো এবারও পার্ক স্ট্রিটে ক্রিসমাস ইভে শুধুই মানুষের মাথা ৷ চলছে ঘোরাঘুরি, সঙ্গে দেদার খাওয়া-দাওয়া ৷ রাত যত বেড়েছে পার্ক স্ট্রিটে ভিড় ততই বেড়েছে ৷ যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সান্টার লাল-সাদা টুপির ছড়াছড়ি ৷ মাথায় সান্তা ক্লজের টুপি পরে ৮ থেকে ৮০ সকলেই হাজির পার্ক স্ট্রিটের ঝলমলে রাস্তায় ৷ কারও কারও মাথায় আলো লাগানো ব্যান্ড ৷ মুখে বাঁশি, চোখে রঙিন চশমা পরে ছোটরাও মা-বাবার সঙ্গে এসেছে এখানে ৷
তাছাড়া খাওয়াদাওয়াও একটি বড় ব্যাপার। সেটা ছাড়া পার্কস্ট্রিটের বড়দিন অসম্পূর্ণ। ফ্লুরিস থেকে পিটার ক্যাট, পুরনো ও নতুন রেস্তোরাঁগুলো বড়দিনে বিশেষ খাবার ও কেকের আয়োজন করে। ক্রিসমাস পুডিং, প্লাম কেক, রোস্ট, সব মিলিয়ে সুস্বাদু খাবারের টানেও হাজার হাজার মানুষ আসেন। তবে হ্যাঁ, সেই খাবারের জন্য লাইনও যেমন পড়ে, তেমনই তার দামও আকাশছোঁয়া।
বড়দিন উপলক্ষ্যে পার্কস্ট্রিট চত্বরে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। আলোকসজ্জা ও অ্যালেন পার্কের অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রচুর মানুষ সেখানে হাজির হন। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকে। এবারও নিরাপত্তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পার্কস্ট্রিটের বড়দিন আজ আর শুধু ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বাঙালি-অবাঙালি সকলেরই মিলনক্ষেত্র। এখানে কেউ আসেন প্রার্থনায়, কেউ আসেন খাওয়াদাওয়া করতে আবার কেউ আসেন বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে। তাই বড়দিনে পার্কস্ট্রিট এখন আর শুধু একটি রাস্তা নয়, কলকাতার আবেগের ডেস্টিনেশন।
২০২৫ এর ক্রিসমাসের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে চেনা ভিড়ের ছবি ধরা পড়েছে। রাত যত গভীর হয়েছে ততই বেড়েছে নিজস্বী তোলার উন্মাদনা। রাত সাড়ে আটটার মধ্যেই অ্যালেন পার্ক মুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মধ্যরাতে লাল টুপি আর ঝলমলে হেয়ার ব্যান্ড কিংবা ঝিকিমিক আলোর চশমায় কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় বড়দিনের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলেছে।
হরেক রকম আলো এবং মানুষের ভিড়ে জমজমাট বো ব্যারাকের ক্রিসমাস কার্নিভালও।
২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন আর আলোর রোশনাই-এ সেজে উঠেছে বো ব্যারাক চত্বরও। ফি বছর এখানে ভিড় করেন শহরের মানুষ। তবে বড়দিনের মরসুমে এ পাড়ার ব্যস্থতা অনেকটাই বেশি। পার্ক স্ট্রিট, সেন্ট পলস, ক্যাথিড্রালেও মতোই এখন এই বো-ব্যারাকও শহুরে বাসিন্দাদের অন্যতম ডেস্টিনেশন বড়দিনের মরসুমে।